নিজস্ব প্রতিবেদক:
সেলজুক সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ বাইজেনটাইনদের আক্রমণ মোকাবিলায় মধ্য এশিয়ার এক যাযাবর গোত্রের প্রধান আর্তগুরুলকে স্মার্নাতে (বর্তমান ইজমির) একটি জায়গির বা জমিদারি উপহার দেন। আর্তগুরুলের ছেলে ওসমান এক সময় ভিত্তি গড়ে তোলেন বিশাল ওসমানীয় সাম্রাজ্যের। বাংলাদেশে এমন একটি নাম সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ। বর্তমান বিশ্বে সাম্রাজ্যও নেই, ক্ষুদ্র বদ্বীপ বাংলাদেশে জমিদারি প্রথাও নেই; কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আনুকূল্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরী দেশে যেমন নিজের জমিদারি বানিয়েছেন, বিদেশেও গড়ে তুলেছেন সম্পদ-সাম্রাজ্য। আগের কালের সাম্রাজ্যবাদীদের মতো দখল দিয়েই শুরু সাইফুজ্জামান চৌধুরীর। ঘটনাটি ১৯৯৯ সালের ২৬ আগস্টের। প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা, দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুকে সঙ্গে নিয়ে অস্ত্রের মুখে বেসরকারি খাতের ইউসিবিএল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দখল করে নেন তার ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ। একইভাবে গণপূর্তের সরকারি জায়গা দখল করে নির্মাণ করেন আক্তারুজ্জামান সেন্টার। নগরের সার্সন রোডের মুখে এক ব্রিটিশের জায়গা দখল করে বানান নিজেদের আলিশান বাড়ি। এসব দখল করে থেমে থাকেননি সাইফুজ্জামান। বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরীর মৃত্যুর পর পারিবারিক সূত্রে সংসদ সদস্য হন তিনি। এক পর্যায়ে ভূমি প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী। খুলে যায় তার ভাগ্যের চাকা। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ, ভূমি অধিগ্রহণ বাণিজ্য, আনোয়ারার ইপিজেড, সিওএফএল, কাফকোর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য দখল, বন্দরে আধিপত্য, ইয়াবা ব্যবসা, টেন্ডার-বাণিজ্য—এ সবকিছু চলে আসে তার হাতের মুঠোয়। এভাবে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন দেশ-বিদেশে।
যেভাবে সম্পদ বানান সাইফুজ্জামান বন্দর, আনোয়ারা, কর্ণফুলীসহ চট্টগ্রামের সবকটি সরকারি প্রকল্পে ‘ভূমি অধিগ্রহণ’ খাতে হাজার কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি এসব কাজ করিয়েছেন তার একান্ত সহকারী (এপিএস) রিদুয়ানুল করিম সায়েমকে দিয়ে। মূলত সায়েমই স্থানীয়ভাবে তার অপরাধ সাম্রাজ্যের দেখাশোনা করতেন। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘কাফকো’র নিয়োগ, পরিবহন ব্যবসা থেকে শুরু করে চিটাগাং ইউরিয়া সার কারখানার সরবরাহ বাণিজ্য সবকিছুর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল ভূমিমন্ত্রীর এপিএস রিদুওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েমের। দুই দফায় মন্ত্রীর এপিএস হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সব খাতে কমিশন ও ঘুষ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। অভিযোগ আছে, আনোয়ারাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে শহরে ইয়াবা পাচারের রুট নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক ভূমিমন্ত্রীর এপিএসের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার এক কর্মকর্তা জানান, ভূমিমন্ত্রীর আস্থাভাজন একটি ছায়া সিন্ডিকেট পুরো ভূমি অধিগ্রহণ শাখার ক্ষতিপূরণের অর্থ লোপাট করেছে। সার্ভে প্রতিবেদনে জমির প্রকৃত মূল্যের দ্বিগুণ, তিনগুণ দেখানো হতো অধিগ্রহণ করা জমি।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর হয়ে অধিগ্রহণে ঘুষ বাণিজ্য, কাফকো ও সিইউএফএলে নিয়োগ বাণিজ্য, ঠিকাদারি ব্যবসা, পরিবহন ও কর্ণফুলী নদীর ঘাট নিয়ন্ত্রণ, জমি দখল, সবকিছুর দেখভাল করতেন তার এপিএস রিদুয়ানুল করিম সায়েম। এ টাকার বড় একটি অংশ সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পকেটে যেত। গত ১০ বছরে সায়েম নিজেও কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আত্মগোপনে চলে যান রিদুয়ানুল করিম সায়েম। এ কারণে বক্তব্য নিতে কালবেলা তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
আনোয়ারা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ ইদ্রিস কালবেলাকে বলেন, সায়েমের মাধ্যমে ইয়াবার ব্যবসা পর্যন্ত করতেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। সরকারি প্রত্যেকটি কাজ থেকে তিনি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন খেতেন। মুক্তিযোদ্ধা কিংবা এলাকার জন্য তিনি একটি কাজও করেননি।
ঘুষ খেয়ে কর্ণফুলীতে আজগুবি একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি ড্রাই ডকইয়ার্ড কোম্পানি থেকে সাবেক এক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং এক ঠিকাদারের কাছ থেকে ৬ কোটি টাকা ঘুষ নেন সাইফুজ্জামান। পরে একনেকে পাস করানো হয় ৫৮৪ কোটি টাকার বিতর্কিত ওই প্রকল্পের। বর্তমানে প্রকল্পটি বাতিল চেয়ে পাঁচ মন্ত্রণালয় ও দুই দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পাঁচ ব্যক্তি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও অর্থ বিভাগের সচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ও সড়ক ভবনের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে জমা হয়। কর্ণফুলী-আনোয়ারা উপজেলার এলাকাবাসীর পক্ষে মো. হারুন চৌধুরী, ইনামুল হোসেন, আব্দুল শুক্কুর, মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং এ এম মোহাম্মদ নূর উদ্দিন এই অভিযোগটি করেন।
ব্যাংক-সরকারি জমি দখল অস্ত্রের মুখে বেসরকারি খাতের ইউসিবিএল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দখল করেছিলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বাবা প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। তখন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগেরই আরেক নেতা জাফর আহমেদ চৌধুরী। দুজনই চট্টগ্রামের রাজনীতিতে পরিচিত ছিলেন। যদিও তখন ব্যাংক দখলের সঙ্গে সরকার বদলের কোনো বিষয় ছিল না বরং অস্ত্রের জোরে নিজের আধিপত্য কায়েম করেছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাভেদের বাবা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। ১৯৯৯ সালের ২৬ আগস্ট দখল করার পর দুই যুগ ধরে ব্যাংকটির মালিকানা সাবেক ভূমিমন্ত্রী পরিবারের। এ ছাড়া চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের মালিকানাধীন জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছিল ‘আক্তারুজ্জামান সেন্টার’ নামের বহুতল মার্কেট। ‘সাব-কবলায়’ ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান বিক্রি করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর। পরে নকশা পরিবর্তন করে নিচতলার কার পার্কিংয়ে নতুন করে নির্মাণ করা হয় বেশ কিছু দোকান। সেসব দোকানও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
আক্তারুজ্জামান সেন্টারে দোকান ক্রয় করেছিলেন লুৎফুর রহমান সোহেল নামের এক প্রবাসী। প্রথম ফ্লোরে দোকান বুকিং দিলেও পরে পার্কিংয়ের অজুহাতে ভিন্ন ফ্লোরে দোকান দেওয়া হয় তাকে; কিন্তু পরবর্তী সময়ে কার পার্কিংয়ের একটি অংশে দোকান নির্মাণ করে বিক্রি করে ‘ডেভেলপার’।
সোহেল জানান, ‘এক-এগারোর সময় মার্কেটের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। তখন মার্কেটটিতে দোকান ক্রয়কারী ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিল; কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়।’
সার্সন রোডে পৈতৃক বাড়িতে বসবাস করেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এই বাড়িটির পার্শ্ববর্তী প্লটের মালিক জানান, ডানকান কোম্পানির জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পৈতৃক বাড়ি যেখানে অবস্থিত সেটিও দখল করা জমিতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পৈতৃক বাড়ির কাছাকাছি আরেকটি জমি দখল করে নেন জাভেদের ভাই। একটি অনলাইন গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হবার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে উঠিয়ে নেওয়া হয় ২০২০ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে। পরে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর ওই প্রতিবেদককে মুমূর্ষু অবস্থায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের একটি খালের পাশের ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। গোলাম সরওয়ার নামের ওই সাংবাদিক চট্টগ্রামের কাজীর দেউরি এলাকা থেকে অপহৃত হয়েছিলেন। মুক্ত হবার পর রোমহর্ষক কাহিনি বর্ণনা করলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করতে সাহস পাননি গোলাম সরওয়ার। এক পর্যায়ে তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে।
বিদেশে যত সম্পদ
কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরার একটি ভিডিও প্রতিবেদনে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে বিপুল সম্পত্তি থাকার তথ্য উঠে এসেছে। গত বুধবার রাতে ‘দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস’ শিরোনামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আলজাজিরা। অনুসন্ধান করেছে আলজাজিরার অনুসন্ধানী দল ‘আই ইউনিট’। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু যুক্তরাজ্যেই প্রায় ৩২ কোটি ডলার মূল্যের ৩৬০টি বাড়ির মালিক সাইফুজ্জামান। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকার বেশি।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল লন্ডনের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে টাওয়ার হ্যামলেটসে আবাসন, যেখানে ইংল্যান্ডের বৃহত্তম বাংলাদেশি কমিউনিটির আবাসস্থল এবং লিভারপুলে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ভবন। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রপার্টির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যখন এই প্রপার্টিগুলো কেনা হয়, তখন যুক্তরাজ্যজুড়ে তীব্র আবাসন সংকট চলছিল এবং এর ৯০ ভাগই ছিল সদ্য তৈরি নতুন বাড়ি।
যুক্তরাজ্যে তার যে সম্পত্তি রয়েছে, সেগুলো অন্তত আটটি কোম্পানির কেনা। এসব কোম্পানির প্রতিটিতেই ভূমিমন্ত্রীর উল্লেখযোগ্য অংশীদারত্ব রয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো আরামিট প্রপার্টিজ, রুখমিলা প্রপার্টিজ, সাদাকাত প্রপার্টিজ, নিউ ভেঞ্চারস (লন্ডন) লিমিটেড, জিটিএস প্রপার্টিজ, জেবা প্রপার্টিজ, জিটিজি প্রপার্টি ভেঞ্চারস লিমিটেড ও জারিয়া প্রপার্টিজ। এসব কোম্পানি ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
লন্ডনের বাইরে দুবাইয়ে ২০২০ সালের মধ্যে অন্তত ৫৪টি সম্পদের মালিক হন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্রেও তার সম্পত্তি আছে। সেখানে তিনি ৯টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। এর মধ্যে পাঁচটি ম্যানহাটানসহ নিউইয়র্কের প্রধান এলাকায় এবং চারটি নদীর ওপারে নিউজার্সিতে। তার নামে থাকা বিদেশি ব্যাংকের হিসাবগুলোতে জমা রয়েছে বড় অঙ্কের অর্থ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নিয়ে এখন পর্যন্ত সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাদের পরিবারের কোনো সদস্য বিদেশে অর্থ নেননি। ফলে কীভাবে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৪ সালে র্যাপিড র্যাপ্টর এফজিই ও ২০১৫ সালে জেবা ট্রেডিং এফজিই নামে কোম্পানি খোলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এর মধ্যে র্যাপিড র্যাপ্টর এফজিই কম্পিউটার ও সফটওয়্যার ব্যবসা এবং জেবা ট্রেডিং এফজিই ভবন নির্মাণসামগ্রী বিক্রির জন্য নিবন্ধিত। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব রয়েছে দুবাই ইসলামিক ব্যাংক, ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের দুবাই শাখায়। এসব হিসাবে জমা রয়েছে ৩৯ হাজার ৫৮৩ দিরহাম ও ৬ হাজার ৬৭০ ডলার। সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৭ সাল থেকে গত মাস পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৬টি স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করেছেন।
রুখমিলা জামানের নামে ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ও ৩০ নভেম্বর দুবাইয়ের আল-বারশা সাউথ-থার্ড এলাকায় দুটি স্থাবর সম্পত্তি কেনা হয়। এই সম্পত্তির মূল্য ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ দিরহাম, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে ৭ কোটি টাকার সমপরিমাণ। দেশটিতে সম্পদ গড়ে তুলছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবার। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয়বহুল এই বাণিজ্যিক শহরের বিজনেস বে এলাকায় তখন তাদের পাঁচ তারকা হোটেলের নির্মাণকাজ চলছিল।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রেও তাদের সম্পদের খোঁজ পেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ২০২১ সালের ৮ মার্চ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘টিডি ব্যাংকে’ সাইফুজ্জামান চৌধুরীর জিটিএস প্রপার্টিজ এলএলসির হিসাবে ৪৫ হাজার ৩৪০ ডলার জমা হয়। এসব অর্থ জমা হয় ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংক এবং এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে। কিছু অর্থ যায় মার্কিন একটি কোম্পানি ক্যাপিটাল ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম লিমিটেড থেকে।
এ ছাড়া সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান আরামিট প্রপার্টিজ এলএলসি এবং জিটিএস প্রপার্টিজ এলএলসি পক্ষে ফার্স্ট আমেরিকান টাইটেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ১৭ লাখ ৬৫ হাজার ডলার জমা করা হয়। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নাহার ম্যানেজমেন্ট ইনকরপোরেটেডের মাধ্যমে ২০০৫ সাল থেকে দেশটিতে বিভিন্ন সময়ে ৯টি স্থাবর সম্পত্তি কেনা হয়। এই তথ্য বিএফআইউর নথি থেকে পাওয়া গেছে। আরামিট প্রপার্টিজ এলএলসি, জিটিএস প্রপার্টিজ এলএলসি এবং নাহার ম্যানেজমেন্ট ইনকরপোরেটেড—এই তিনটিই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি।