এর মধ্যে গাবতলী দিয়ে ঢাকায় আসে ১৮ জেলার মানুষ।
উত্তরা দিয়ে ৫ জেলার মানুষ।
যাত্রাবাড়ি দিয়ে ৪০ জেলার মানুষ।
.
এই তিন পয়েন্টের বাইরে যে রাস্তাগুলো আছে সেগুলোর ডিজাইন ভালো না। তাই প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহারের অযোগ্য। যেমন ধরেন বাবুবাজার সেতু পারতপক্ষে কেউ ব্যবহার করবে না কারণ পুরান ঢাকার যানজট পাড়ি দিতে কমপক্ষে ৩ ঘন্টা লাগবে। ৩০০ ফিটের রাস্তা কেউ ব্যবহার করবে না কারণ রাস্তা সরু আর প্রায় ১৫ কিমি বেশি ঘুরতে হয়। ইত্যাদি।
.
এখন ফিরে আসি ওই তিন প্রবেশপথের প্রসঙ্গে। এই তিন প্রবেশপথের মধ্যে যেটা সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো উত্তরার রাস্তা। এটা দিয়ে ৫ জেলার মানুষ ঢাকায় ঢুকে। এই রাস্তায় আছে ৪ লেন মহাসড়ক, বাস র্যাপিড ট্রানজিট, দুইটা এক্সপ্রেসওয়ে (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আর আশুলিয়া-ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে)।
.
উত্তরার রাস্তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ গাবতলী। এটা দিয়ে ১৮ জেলার মানুষ ঢাকায় আসে। এতে ৪ লেন মহাসড়ক আছে। তবে এক্সপ্রেসওয়ে নেই। রাতে এই রাস্তায় ব্যাপক যানজট থাকে।
.
এরপর আসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ি। এটা দিয়ে ৪০ জেলার (চট্টগ্রাম, সিলেট, দক্ষিণবঙ্গ) মানুষ ঢাকায় আসে। এই প্রবেশপথটা সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে মজাদার প্রবেশপথ। সিলেট মহাসড়কের ৪ লেন, চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৬ লেন, মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ৪ লেন = মোট ১৪ লেন সড়ককে একত্র করে ১ লেন বানানো হয়।
.
বিষয়টি বুঝিয়ে বলি। প্রথমে সিলেট মহাসড়ক এনে চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে সিলেটের ৪ লেন আর চট্টগ্রামের ৬ লেন মিলে জোর করে ৬ লেন করা হয়েছে, যেখানে প্রয়োজন ছিল ১০ লেন। এই ৬ লেন এসে ঢুকেছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে।
.
এদিকে বাম দিকে থেকে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ৪ লেনও মেয়র হানিফে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মানে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ১৪ লেন মহাসড়কের চাপ নিয়েছে।
.
এখন হানিফ ফ্লাইওভার যে ঢাকায় ঢুকলো সেটার দিকে তাকাই। হানিফের এক্সিট পয়েন্ট দুইটা। একটা গুলিস্তান (২ লেন)। এই ২ লেন একেবারেই অব্যবহারযোগ্য। হকারদের জন্য গুলিস্তান দিয়ে কোন গাড়ি, বাস ঢোকার উপায় নেই। তাই গুলিস্তানের এক্সিট পয়েন্ট বাতিল।
বাকি থাকলো চানখারপুল এক্সিট। শুধু এটাই কাজ করে। এটা মাত্র ১ লেন। দুটো গাড়ি পাশাপাশি দাঁড়ানোরও উপায় নেই। ১৪ লেন মহাসড়ক এনে জোর করে ১ লেন করা হয়েছে।
.
প্রশ্ন আসবে, তাহলে এই ট্রাফিক সিস্টেম কাজ করে কীভাবে?
উত্তর হলো, করে না।
প্রতিদিন চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১২ কিলোমিটার, মাওয়া মহাসড়কে ২ কিলোমিটার আর সিলেট মহাসড়কে ৬ কিলোমিটার যানজট লেগে থাকে। প্রতিদিন যাত্রাবাড়ি থেকে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে আসতে এত ৪০ জেলার মানুষ ৫ কিলোমিটার রাস্তায় ন্যূনতম ৩ ঘন্টা বসে থাকে।
.
এতো বড় ভোগান্তির কথা আপনি আমি জানি না কেন?
জানি না কারণ আমাদের মিডিয়া হাউজগুলো ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে অবস্থিত। যাত্রাবাড়ির যানজট পাড়ি দিয়ে কোন ব্যক্তির পক্ষে সকাল ১০টায় উত্তর ঢাকায় গিয়ে অফিস ধরা রীতিমত সুপারহিউম্যানের কাজ। ফলে মিডিয়া ও সাংবাদিক এবং অন্য যারা আমাদের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ করেন তারা সবাই বাস করেন নিকেতন, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, খিলগাও, বনানী বা ফার্মগেটের দিকে। ফলে ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ এবং ঢাকার সর্বাধিক জনসংখ্যাপূর্ণ ৪টি থানা কখনোই কোন মিডিয়াতে গুরুত্ব পায় না। যে কারণে এলাকা বিচারে এই গণঅভ্যুত্থানে সারা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ছাত্র ও পুলিশ যাত্রাবাড়িতে মারা গেলেও আমরা জানিনা।
.
এটা শুধু একটা উদাহরণ দিলাম। জাস্ট এলিট শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রতিটা উন্নয়ন প্রকল্পে সর্বনাশ হয়ে চলেছে।
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.