শেখ ইসতিয়াক। বাংলাদেশের সঙ্গীতে ‘মেলোডি কিং’ হিসেবে পরিচিত। খুব অল্প সময়ের জীবনে উনি আমাদের দিয়ে গেছেন অসামান্য সব গান। গতকাল ছিল ওনার মৃত্যুবার্ষিকী।
“ছোটবেলা থেকে ধ্রূপদী সঙ্গীতে তালিম নেয়া শেখ ইশতিয়াক ১৯৭৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে গঠন করেন ব্যান্ডদল ‘সন্নাসী’। সেই থেকে গিটার বাদক হিসেবে মঞ্চে তিনি জনপ্রিয়। অবশেষে ১৯৮৬ সালে ‘ওগো বিদেশিনী’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের মাধ্যমে পেশাদার শিল্পাঙ্গনে প্রবেশ। সে বছরেই মাকসুদ জামিল মিন্টুর সুরে প্রথম অ্যালবাম ‘নন্দিতা’ প্রকাশ করে অল্প সময়েই ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পান। ‘নন্দিতা’ অ্যালবামের ‘নীলাঞ্জনা’, ‘একদিন ঘুম ভেঙ্গে দেখি’, ‘আমার মনের ফুলদানিতে’ গানগুলো আজো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। বাংলাদেশের ‘মেলোডি কিং’ হিসেবে পরিচিত শেখ ইসতিয়াকের সর্বমোট ৭টি একক অ্যালবাম বাজারে এসেছিল।১৯৯৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করেছিলেন প্রতিভাধর এ শিল্পী।
.
আশির দশকে যে ক’জন কণ্ঠশিল্পী মেধা আর মননের যৌথ মিশ্রণে সংগীতলোকে একটি নিজস্ব প্রেক্ষাপট রচনা করতে সক্ষম হয়েছিলেন, শেখ ইসতিয়াক তাদেরই একজন। ছোটবেলা থেকে ধ্রুপদী সংগীতে তালিম নেয়া শেখ ইশতিয়াক ১৯৭৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে গঠন করেছিল ব্যান্ডদল ‘সন্নাসী’,। সেই থেকে গিটার বাদক হিসেবে মঞ্চে জনপ্রিয়।
‘এই নীল মণিহার’ গানটির জন্ম ১৯৭৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর আজিমপুরের ১৬ নম্বর বিল্ডিংয়ে। গীতিকার এস এম হেদায়েত (প্রয়াত), ইশতিয়াক (প্রয়াত) ও আমি একসঙ্গে বসে গানটি তৈরি করি। মনে আছে, ওই দিন সকালে আজিমপুরের বাসা থেকে বের হয়ে আমরা তিনজন যাচ্ছিলাম নীলক্ষেতের দিকে। যাওয়ার সময় পথে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজের শব্দ কানে এল। ওই রিদমটা কানে বাজতে লাগল। কিছুক্ষণ পর বাসায় ফিরি। তারপর তিনজন বসে পড়ি একটি নতুন গান করার ইচ্ছে নিয়ে। ইসতিয়াক গিটারে বি মাইনর কর্ডটা ধরে প্ল্যাকিং করছিল। কিবোর্ডে আমার আঙুল ছুঁতে ছুঁতে একটা সুর এসে যায়। ওই সুরের ওপরই এস এম হেদায়েত লিখলেন “এই নীল মণিহার এই স্বর্ণালী দিনে, তোমায় দিয়ে গেলাম, শুধু মনে রেখো”।
বাংলাদেশের সঙ্গীতে মেলোডি’র এক নতুন দিকপাল হয়েছিল ইসতিয়াক।গানগুলো আজো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। তাঁর গাওয়া “নীলাঞ্জনা” তো এক চিরসবুজ প্রশান্তির নাম।১৯৯৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বড় অসময়ে চলে যায় ইশতিয়াক।হ্যাপি চলে যাবার এক দশকের কিছু পরে, আবারও সেই স্বজন হারানোর তীব্র ব্যথা আমাকে গ্রাস করেছিল।
“বিরহ ব্যাথাতে এ মন ভেঙ্গে যায়
না পাওয়ার আঁধারে খুঁজেছি তোমায়
কতগুলো ফাগুন গিয়েছে ফিরে
আশাগুলো কেঁদেছে তোমার দ্বারে
আজ সব ব্যাথা ভুলে যাবো
চেয়ে দেখো না
তোমার ঐ দুটি চোখে
আমি হারিয়ে গেছি
আমি বোঝাতে তো কিছু পারিনা
নীলাঞ্জনা”
ভালো থেকো ইশতিয়াক,দূরে কোথাও…..ভালো থেকো…..”
—- লাকি আখন্দ
.
বড় ভালো লোক ছিলেন শেখ ইসতিয়াক। অনেকদিন দেখা হয়েছে ওনার সঙ্গে, কথাও হয়েছে অনেক। সব সময়ই মুখে লেগেছিল হাসি। এক সময়ের অসম্ভব জনপ্রিয় এই শিল্পী তার এ্যালবাম তার বাবা মা কে উৎসর্গ করে যান, যা তিনি মৃত্যুর পূর্বেই আমাকে বলে যান। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। তিনি নিজের গানের ব্যাপারে সবসময় আশাবাদি ছিলেন। কখনো হতাশ হতেন না। আমাকে বলতেন, এবারের এ্যালবামে আরও ভালো গান করেছি। ইনশা আল্লাহ শ্রোতারা পছন্দ করবে। ওনার কথা শুনে আমিও আশাবাদি হতাম। একদিন আমারই এক অনুষ্ঠানে আসার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলেন তিনি, উপহারও কিনেছিলেন। কিন্তু আসতে পারেননি। নিয়তি তাকে আমাদের থেকে অনেক দুরে নিয়ে গেছে। ভাবী যেদিন উপহারটা আমার হাতে দিলেন, আমি খুশি হতে পারিনি। কোন উপহার মানুষকে এতো কষ্ট দেয়, জানা ছিল না। ‘’ তুমি অভিমানী’’ শেখ ইসতিয়াকের সাউন্ডটেক কে দেয়া শেষ এ্যালবাম ছিল।
— সুলতান মাহমুদ বাবুল
MUSIC GARDEN “MG” পরিবারের পক্ষ থেকে এই লিজেন্ড এর জন্য রইলো শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর দোয়া।
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.