গোলাপী এখন ট্রেনে -------
১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া গোলাপী এখন ট্রেনে এর কথা। লিখেছেন সৈকত সালাহউদ্দিন!
গ্রামের বাড়ি জামালপুর যাচ্ছিলেন আমজাদ হোসেন। ট্রেনে নানা শ্রেণির মানুষ দেখতে দেখতেই খুঁজে পান গোলাপী এখন ট্রেনে উপন্যাসের প্লাট। লেখার সময় মাথায় সিনেমার ভাবনাও ছিল। "গোলাপী এখন ট্রেনে" ছবির জন্য লগ্নিকারক খুঁজতে শুরু করলেন।
ঘটনাটি বলছিলেন তাঁর একান্ত সহকারী আব্দুস সামাদ খোকন। আগের ছবি "নয়নমনি" দারুণ সফল হলেও প্রযোজক এ কে এম জাহাঙ্গীর খান "গোলাপী এখন ট্রেনে" প্রযোজনা করতে আগ্রহ দেখাননি। তাঁর মতে,
নিম্নবিত্তের সংগ্রামের গল্প দেখতে আগ্রহ দেখাবে না দর্শক। একটু দমে গিয়েছিলেন আমজাদ হোসেন।
পরে নিজেই টাকা জোগাড় করে শুরু করলেন শুটিং। বিএফডিসিও যুক্ত হলো। ছবির শুটিং হয় মানিকগঞ্জে।
সে সময়ের গ্রামীণ জীবনের চিত্র সেলুলয়েডে তুলে ধরলেন পরিচালক।
গোলাপীদের সংগ্রামের গল্পের পাশাপাশি মোড়লের ছেলেরূপী বিদ্রোহী মিলনও আছে। তার করুণ পরিণতি মনে করিয়ে দেয়,স্বার্থবাদী গোষ্ঠী পথের বাধা দূর করতে নিজের লোককে বলি দিতেও দ্বিধা করে না।
ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কামরায় উঠে পড়ার পর গোলাপীকে চলে যেতে বলায় তার মুখে শোনা যায়, "বাংলাদেশে কোনো কেলাস নাইগো - আমরা হগলেই এক কেলাসের মানুষ" গোলাপীর মুখ দিয়ে পরিচালক তাঁর মনের কথাটাই দর্শককে জানিয়ে দিলেন।
এক ফ্রেমে একইসঙ্গে এত অসামান্য অভিনয় সচরাচর বাংলাদেশের ছবিতে দেখা যায় না। "আছেন আমার মোক্তার - হায়রে কপাল মন্দ" সহ ছবির সব গানই দর্শকপ্রিয়।
নয়নমনি এর পর এ টি এম শামসুজ্জামান এখানেও মোড়ল। লুক পরিবর্তনের জন্য তাঁকে চুল কেটে ফেলতে বললেন পরিচালক। এ কারণে বেশ কয়েক মাস অন্য ছবিতে অভিনয় করতে পারেননি তিনি। শুটিংয়ে মোড়লের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর ক্যামেরার সামনে দাঁড় করান পরিচালক। এ টি এম শামসুজ্জামানের সংলাপ সত্যি মনে করে তাঁর ওপর খেপে যায় গ্রামবাসীরা।
ছবিতে আনোয়ার হোসেনের আত্মহত্যার দৃশ্যে যথার্থ ভোরের আলোটি ধারণের জন্য তিন দিন অপেক্ষা করে পুরো ইউনিট। ছবির প্রয়োজনে একটা বাড়ি পোড়াতে হবে। পরিচালক প্রতিদিনই পরিকল্পনা করেন সেট বানাবেন। কিন্তু টাকা নেই যার বাড়িতে শুটিং চলছিল তিনি বুঝলেন আমজাদ হোসেনের অবস্থা,নিজের আরেকটি বাড়ি বিনা মূল্যে পোড়ানোর অনুমতি দিলেন তিনি।
একই বছরে "সারেংবৌও" মুক্তি পেয়েছিল।
কে পুরস্কার পাবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিল দুই ছবির কলাকুশলীদের মধ্যে। যদিও "সারেংবৌ" পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন অভিনয় করেছেন এই ছবিতেও।
সেবারের জাতীয় পুরস্কারে "গোলাপী এখন ট্রেনে" এর জয়জয়কার। পুরস্কার পায় ১১টি বিভাগে - শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র,পরিচালনা,চিত্রনাট্য,সংলাপ,গীত,পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা "আনোয়ার হোসেন" পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী "আনোয়ারা" চিত্রগ্রহণ,সংগীত পরিচালনা,
শ্রেষ্ঠ গায়ক সৈয়দ আব্দুল হাদী ও শ্রেষ্ঠ গায়িকা সাবিনা ইয়াসমিন। চারটি বিভাগে পায় বাচসাস পুরস্কার - পার্শ্ব চরিত্রে এ টি এম শামসুজ্জামান ও আনোয়ারা,সংলাপ ও চিত্রগ্রহণে।
টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে শুটিং হলেও মুক্তির পর হাসি ফোটে ছবিসংশ্লিষ্ট সবার। ছবির নির্মাণব্যয় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। প্রদর্শক মিয়া আলাউদ্দিনের মতে প্রায় কোটি টাকা আয় করে ছবিটি। আমজাদ হোসেনও এই ছবি দিয়ে প্রযোজক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
সংগৃহীত