1. admin2@dailysmtv24.com : admin :
  2. admin@dailysmtv24.com : admin :
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ পূর্বাহ্ন

স্বর্গীয় আর্য্যশ্রাবক ডাঃ রাজেন্দ্র লাল মূৎসুদ্দী স্মরণে।

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪
  • ২৭ Time View

 

লেখক:- হৃদয় বড়ুয়া, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।

গুমান মর্দ্দন মুৎসদ্দীপাড়া তথা পুরো বড়ুয়াপাড়ার ইতিহাস লিখতে গেলে আর্য্যশ্রাবক ডাঃ রাজেন্দ্র লাল মূৎসুদ্দী নামই বলতে হয় প্রথম। যেই নামে মূৎসুদ্দী বাড়ি বিধৃত হয়ে রয়েছে যা গ্রামের গৌরবোজ্জ্বল এক অনন্য ইতিহাস। যাঁর কৃতকর্মে অমর হয়ে রয়েছেন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাঙ্গালী প্রথম বিদর্শনাচার্য, বাঙ্গালী বৌদ্ধ সমাজের দিগদর্শন, পথিকৃৎ ও ঊষা লগ্নের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, মানবকল্যাণকারী, গ্রামীণজনপদের একজন মহাপুরুষ তাঁর প্রধান পরিচয়। কিন্তু এই প্রসিদ্ধির আড়ালে চাপা পড়ে গেছে তাঁর আরও বহুতর পরিচয়। তিনি ছিলেন মানব কল্যাণে নিবেদিত বিদর্শন সাধক দেশে-বিদেশে নাম-যশ খ্যাতিসহ অসাধারণ শক্তিমান সাধু পুরুষ। সুঠাম দেহের এই মানুষটির ডাক্তারি ছিল পেশা, সমাজহিতৈষী- মানবকল্যাণ ছিল তাঁর নেশা। কর্মক্ষেত্রে ব্রহ্মদেশের পেগু জেলার ‘ডইকুতে’ ডাক্তারি করলেও নাড়িটান ছিল মাত্রাতিরিক্ত। শিক্ষাব্রতী সহ নানা রূপে নানা ক্ষেত্রে সমাজ ও মানুষের হিতকর কর্মের প্রবর্তনায় এক কল্যাণময় পুরুষের অবির্ভাব প্রত্যক্ষ করে বৃহত্তর গুমান মর্দ্দন তথা সমগ্র চট্টগ্রাম। আর্য্যশ্রাবক ডাঃ রাজেন্দ্র লাল মূৎসুদ্দী এই মানবকল্যাময়-বহুমুখী প্রতিভাবন ও বিদর্শন সাধক মহাপুরুষটি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলাধীন বৃহত্তর গুমান মর্দ্দনের দক্ষিণ বড়ুয়া পাড়া (বর্তমানে মূৎসুদ্দী বাড়ি নামে পরিচিত) বৌদ্ধ পরিবারে ৮ই জ্যৈষ্ঠ রবিবার ১২৯৫ সন (২৪৩২ বুদ্ধাব্দথ ১৮৮৮ ইং) ভূমিষ্ঠ হওন। তাঁর পিতা হরচন্দ্র মূৎসুদ্দী ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ সমাজহিতৈষী ব্যক্তি। তাঁর প্রথম পুত্রদ্বয় রাজেন্দ্র লাল মূৎসুদ্দী ও অনুজ যোগেন্দ্র লাল মূৎসুদ্দী তাঁরা পিতৃগুণে গুণান্বিত। যোগেন্দ্র লাল মূৎসুদ্দীও ছিলেন অত্যন্ত পরোপকারী-প্রগতিশীল, সমাজসেবক-কৃষি বিপ্লবী, গ্রামীণ সংগ্রামী সত্তার নাম। খ্যাতিমান সমাজসেবক ও চিন্তানায়ক যোগেন্দ্র লাল মূৎসুদ্দী হাটহাজারী আপমার জনতার জনসাধারণের পরিচিত নাম ও মূৎসুদ্দী পরিবারের প্রকৃত যাত্রার নাম। তৎকালীন সময় বৃহত্তর অবিভক্ত গুমান মর্দ্দনের সমাজপ্রগতিদের সাথে সুবিনয় সম্পর্ক ছিল তাঁর।
আর্য্যশ্রাবক ডাঃ রাজেন্দ্র লাল মূৎসুদ্দী মামার বাড়ি থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। তারপর তিনি হাটহাজারী হাই স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পেশায় তিনি একজন সফল চিকিৎসক। ব্রহ্মদেশের পেগু বা পেগুইয়োমা জেলার অর্ন্তগত ডইকুতে ‘আয়ুদীঘা’ মেডিকেল হল নামে ঔষধের দোকান খুলে তিনি চিকিৎসা শুরু করেন। পরে কালের বিবর্তনে তিনি কৃষিকার্যেও নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। বেশ কথিত রয়েছে; তাঁর তত্ত্ববধানে ৭০ দোন জমি চাষ হত। মনীষীরা বলেছেন; “সেই ধন্য নরকুলে লোকে যারে নাহি ভুলে, মনের মন্দিরে নিত্য সেবা সর্বজন”। মানবহিতৈষী এই মহান ব্যক্তি প্রথমে মানব কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর চিন্তা ছিল কিভাবে গুমান মর্দ্দন, মির্জাপুর, বালুখালী, রুদ্রপুরের অধিবাসীদের হিত সাধন করা যায়। তাই মানুষের হিতকল্পে নানান বৌদ্ধ হিতৈষিণী সভায় যোগ দিতেন। তিনি সর্বক্ষণ বিহারে হাজির থাকতেন, ধর্ম কথা ব্যতীত অন্য কোন কথা বলতেন না। বিশেষত: ধ্যান-ধারণা, সমাধি-সমাপত্তি, সমথ-বিদর্শন সম্পর্কিত আলোচনা করতেন সর্বক্ষণ। তিনি ভিক্ষু সংঘের প্রতিও অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। বাঙ্গালী বৌদ্ধ সমাজের দিগদর্শন, পথিকৃৎ ও ঊষা লগ্নের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক কালের বিবর্তনে তিনি উপলব্ধি করলেন সংসারে সবই “মায়া”। এখান হতে মুক্তি পেতে হলে জানতে হবে জগৎ ও জীবনকে। আর জগৎ-জীবনকে জানার জন্য চাই বিদর্শন ভাবনা, যার মাধ্যমে ‘মুক্তি’ নামের দূর্লভ বস্তুটি পাওয়া যেতে পারে। তাই তিনি সর্ব মানবের কল্যাণে ১৯৩১ সালে ডাইকু তপোবনে “বিদর্শন যোগাশ্রম” প্রতিষ্ঠিত করেন। যা “বিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদে বাংলার সাধকের মধ্যে বিদর্শন সাধকের প্রচলন হয়। যার প্রর্তক আর্য্যশ্রাবক ডাঃ রাজেন্দ্র লাল মুৎসুদ্দী। “বিদর্শন যোগাশ্রম” প্রতিষ্ঠার পরে অনেক মুকুক্ষ সাধককে সাধনা প্রাণালী শিক্ষা দিয়েছেন। রাজেন্দ্র লাল মুৎসুদ্দীর নিকট সাধনা প্রণালী শিক্ষা নেন পরম পুজ্যাষ্পদ সাধকপ্রবর জ্ঞানীশ্বর মহাস্থবিরও এবং তিনি এক ধর্মীয় সভায় তাঁকে “আর্যশ্রবাক” উপাধিতে অভিষিক্ত করেন। তাছাড়াও বাংলাদেশের দশম সংঘরাজ প্রয়াত ভদন্ত জ্যোতিঃপাল মহাথের ও দ্বাদশ সংঘরাজ প্রয়াত ভদন্ত ড. ধর্মসেন মহাস্থবির মহোদয়ের ভাবনাগুরু ছিলেন। ভারতীয় সংঘরাজ বিদর্শনাচার্য প্রয়াত ভদন্ত ড. রাষ্ট্রপাল মহাথের মহোদয়ও আর্য্যশ্রাবক ডাঃ রাজেন্দ্র লাল মূৎসুদ্দী’র প্রশিষ্য ছিলেন। বাংলাদেশ ও বার্মার অধিক ভিক্ষু ও উপাসক-উপাসিকাদের বিদর্শন সাধনার দীক্ষাগুরু এই মহাপুরুষটি।
“ধর্মদান সকল দানকে জয় করে” ধর্ম দানবীর মানুষটি বার্মা ভাষা অধ্যায়নের মাধ্যমেই প্রথমে তাঁর ধর্মচক্ষু প্রস্ফুটিত হয় এবং এই ভাষার মাধ্যমে তাঁর ধর্মানুসন্ধিৎসা জাগ্রত হয়। বলা যায় অনেক মানুষকে ধর্মদানের ফলে মুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। বেশ কথিত আছে; ১৯৩৭ সালে আর্যশ্রাবক ও তাঁর প্রিয় বর্মী শিষ্যসহ ইনসিল (রেঙ্গুনের নিকটবর্তী শহর) বিহারে ধর্ম দেশনার উদ্দেশ্যে যান, বিহারে আর্য্যশ্রাবকের উপস্থিতির সাথে সাথে প্রায় শ পাঁচেক উপাসক-উপাসিকা এবং বিহারাধ্যক্ষসহ প্রায় একশত বৌদ্ধ ভিক্ষু দাঁড়িয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। আর্যশ্রাবক দেশনা করার সময় বø্যাক বোর্ড ব্যবহার করতেন। বোর্ডে তিনি দুরূহ বিষয় সহজ করার জন্য বিভিন্ন ডাইগ্রাম ও চিত্র আঁকতেন। আরেকটি পন্থার আশ্রয় তিনি নিতেন; সেটি হচ্ছে তাঁর শিষ্য, জটিল বিষয় যা শ্রোতাদের সহজে বোধগম্য হওয়ার কথা নয়, প্রশ্ন করে গুরু (আর্য্যশ্রাবক) হতে উত্তর আদায় করে নিতেন। তাঁর শিক্ষা পাদোদক যে বার্মার ভিক্ষু, উপাসক উপাসিকারা তাঁকে শ্রদ্ধা করত তা নয় এদেশের ভিক্ষুরাও তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেখা গেছে। তিনি যখন অন্তিম শর্য্যায় তখন তাঁর প্রিয় শিষ্য সাধকপ্রবর জ্ঞানেশ্বর মহাস্থবির তাঁকে দেখতে যান এবং তাঁর আশীষ প্রার্থনা পূর্বক শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন আর্য্যশ্রাবক মৃদুস্বরে বলেন “আপনি চীবরধারী ভিক্ষু’ আপনিই আশীর্বাদ করুন” গুরু-শিষ্যের সেদিনের ভাব বিনিময়ের ঘটনা গুমানমর্দনবাসীর মনে এখনও চির জাগ্রত।
“কর্মই মানুষকে পৃথিবীর বুকে বাঁচিয়ে রাখে, কীর্তিমান এবং চিরস্মরণীয় করে”।
জীবনের সব থেকে নির্মম একটি সত্য মৃত্যু, মহান সাধক আর্য্যশ্রাবক ডাঃ রাজেন্দ্র লাল মুৎসদ্দী রবিবার, ১৪ই অগ্রহায়ণ ১৩৫৯ সন (২৪৯৬ বুদ্ধাব্দর-১৯৫২ইং) পরলোক গমন করেন। স্বর্গীয় আর্য্যশ্রাবক ডাঃ রাজেন্দ্র লাল মূৎসুদ্দী অমরত্ব হয়ে রয়েছেন গ্রামবাসী কি’বা বৌদ্ধ সমাজে। যাঁর জীবনালেখ্য, যাঁর স্মৃতিচারণ আজ গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর কর্মকান্ডকে স্মরণ করছে। আমাদের হৃদয় মাঝে তিনি অমরত্ব হয়ে থাকুক সেই কামনা করছি।
এই মহাপুরুষ’কে নিয়ে লিখতে আমাকে আন্তরিকতার সাথে সহযোগিতা করেন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, গুমান মর্দ্দনের সূর্য সন্তান আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন বিধান চন্দ্র বড়ুয়া মামা। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন ও সুস্বাস্থ্য দীর্ঘ আয়ু কামনা করছি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category

© All rights reserved © 2025 Coder Boss

Design & Develop BY Coder Boss