সাংবাদিকতায় প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ— আসুন ব্যাখ্যা সহ বুঝি-
সাংবাদিক নেতাঃ – শেখ তিতুমীর আকাশ।
কয়েক বছর আগের ঘটনা, সবার নিশ্চয় মনে আছে- ঈদের সময় পদ্মায় পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ ডুবে যাওয়ার দৃশ্য এবং সাভারের ৯ তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে পড়ার দৃশ্যের কথা। আর এ দুটি ঘটনারই মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল, যা সেসময় দেশের প্রায় সব জাতীয় টেলিভিশন ও শীর্ষ অনলাইন পত্রিকা ফলাও করে প্রচার করে। এটি সম্ভব হয়েছিল মুঠোফোন প্রযুক্তির কারণে। বর্তমানে প্রতিদিনই এরকম ঘটে যাওয়া নানা দৃশ্য সহজে ধারণ করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে প্রযুক্তির নিত্যনতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের কারণে।
সাংবাদিকতার আদি পর্ব থেকে বর্তমান সময়ের আধুনিক সাংবাদিকতার রূপান্তর একদিনেই তৈরি হয়নি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এ পর্যায়ে এসেছে। আধুনিক প্রযুক্তি সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশনের ধরনকে আমূল পাল্টে দিয়েছে। কাগজের সাংবাদিকতা থেকে অনলাইন সাংবাদিকতা পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনই তৈরি হয়েছে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ। প্রযুক্তির কারণে নানা প্লাটফর্মে সংবাদ মানুষের দোরগোড়ায়
বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যম যেমন- সিএনএন, বিবিসি, আলজাজিরার মতো মূলধারার গণমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রেই নাগরিক সাংবাদিকতার ওপর নির্ভর করছে। সংবাদ-সূত্র হিসেবে নাগরিক সাংবাদিকদের ব্যবহারের পাশাপাশি অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিটি প্রতিবেদনের শেষাংশে ঘটনাস্থলের আশপাশের পাঠককে তাঁদের মতামত বা মন্তব্য তুলে ধরতে অনুরোধ করছে।… ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত অনেক সংবাদই প্রথমে ছড়িয়ে পড়েছিল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পৌছে যাচ্ছে। আগে যেখানে সংবাদের জন্য পরদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করত, সেখানে এখন ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের মুখে মুখে পৌছে যাচ্ছে।
সাংবাদিকতা জগতের প্রথম মাধ্যম হলো সংবাদপত্র, তারপর আসে রেডিও। এদের হটিয়ে জায়গা করে নেয় টেলিভিশন সাংবাদিকতা। তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমশ অগ্রগতির পথ ধরে আজ সাংবাদিকতা ডিজিটাল রূপ ধারণ করেছে। সংবাদপত্রের যুগে মানুষ আরও কিছু চাইছিল, সেই চাহিদাটা পূরণ করেছে রেডিও ও টেলিভিশন। যান্ত্রিক এ যুগে যন্ত্রমানবের হাতে তেমন সময় নেই পরদিন পর্যন্ত পত্রিকা প্রকাশের জন্য কিংবা
ঘণ্টাখানেক পর টেলিভিশনের বুলেটিনের জন্য অপেক্ষা করা। তার চাই- যখনই ঘটনা, তখনই জানা। তাই ডিজিটাল সাংবাদিকতার বিভিন্ন রূপ সেই চাহিদা মেটাচ্ছে। ডেস্কটপ থেকে ল্যাপটপ, ল্যাপটপ থেকে ট্যাব আর স্মার্টফোন। বর্তমানে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, হাতে থাকা ডিভাইসের মাধ্যমে সারা দুনিয়া করায়ত্ত, তখন সংবাদ কী করে নাগালের বাইরে থাকে।
ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা টেলিভিশনে একটি সংবাদ একবার প্রচার হয়ে গেলে তা দ্বিতীয়বার দেখতে পরবর্তী সংবাদ সম্প্রচারের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। কাগজের পত্রিকা প্রকাশ হয় ২৪ ঘণ্টা পরপর। অনলাইন পত্রিকা চলমান ঘটনার সংবাদ প্রকাশের একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকে। এতে আর্কাইভ থাকে, যে কোনো পাঠক ইচ্ছা করলে যে কোনো সময় তার পছন্দের সংবাদটি পড়তে পারেন। প্রয়োজন হলে প্রিন্ট করতে পারেন, খবরের লিঙ্ক অন্যকে পাঠাতে পারেন ইচ্ছেমতো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন অনেক ক্ষেত্রে খবরের উৎস হিসেবে কাজ করছে। সেখানে এখন অনেকেই নিউজ শেয়ার করছেন। শিরোনাম পছন্দ হলে অনেকেই লিঙ্কে ক্লিক করে বিস্তারিত পড়ে নিচ্ছেন। এছাড়া যখন ইচ্ছে, যেখানে ইচ্ছে, মোবাইল ফোনেই অনলাইন পত্রিকা পড়তে পারছেন। প্রযুক্তির কল্যাণে প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে এখন অনলাইন মিডিয়ার প্রতি ঝুঁকছেন পাঠক। অনলাইন সাংবাদিকতা আসলে পাঠককে সময়ের সঙ্গে চলতে সাহায্য করে। যে কোনো সময় যে কোনো খবর অনলাইন পত্রিকা সবার আগে প্রকাশ করতে পারে। সে কারণে অনলাইন সাংবাদিকতা হচ্ছে সবচেয়ে আধুনিক। এ সাংবাদিকতা চতুর্মাত্রিক। অনলাইন পত্রিকায় সাধারণত চারটি মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়- লেখা, ছবি, অডিও ও ভিডিও। অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমে এ সুযোগ নেই বললেই চলে।
অনলাইন সাংবাদিকতা, যাকে আমরা ডিজিটাল সাংবাদিকতাও বলি, সেটি হচ্ছে হালের সাংবাদিকতার একটি ধরন, যার বিষয়বস্তু কাগজ বা সম্প্রচারমাধ্যমের বদলে ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়। ডিজিটাল সাংবাদিকতার সংজ্ঞা নিয়ে অবশ্য যথেষ্ট বিতর্ক আছে। খবর বা ফিচার যখন পাঠ্যবিষয়, অডিও, ভিডিও ও ইন্টারঅ্যাকটিভিটির সহায়তায় ডিজিটাল প্লাটফর্মে প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে আমরা অনলাইন বা ডিজিটাল সাংবাদিকতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি। অন্যভাবে বলতে গেলে, অনলাইন পত্রিকা হলো একটি সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণ, যা এককভাবে শুধু অনলাইনে প্রকাশিত অথবা কোনো মুদ্রিত সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণ হিসেবেও প্রকাশিত হতে পারে।
তথ্য মোতাবেক জানা যায়, ১৯৭৪ সালে ব্রুস পারেলউ ইলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনলাইন সংবাদপত্র চালু করেন।
১৯৮৭ সালে শুরু হওয়া সরকারি মালিকানাধীন ব্রাজিলীয় সংবাদপত্র ‘জর্নালদোদিঅ্যা’ নব্বই দশকের দিকে অনলাইন সংস্করণের সূচনা করে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে শতাধিক সংবাদপত্র অনলাইনে প্রকাশনা শুরু করে ১৯৯০ সালের শেষদিকে।
বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতার শুরু ২০০৫ সালের দিকে।
২০০৬ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বাংলাদেশে প্রথম পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
অনলাইন ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা না থাকায় ২০১০ সাল পর্যন্ত এ মাধ্যমের পাঠক ছিল হাতেগোনা।
এরপর মানুষের হাতের নাগালে সহজে ইন্টারনেট চলে আসে।
বাড়তে থাকে অনলাইন পত্রিকার পাঠক।
বর্তমানে দেশে অনলাইন মিডিয়ার সংখ্যা হাজারেরও অধিক।
তবে আমাদের দেশে কয়েক ধরনের নিউজ পোর্টাল বা অনলাইন সংবাদপত্র দেখতে পাই-
যেমন —
১. ডেইলি ইভেন্ট নিউজ পোর্টাল।
২. বিশেষ সংবাদভিত্তিক নিউজ পোর্টাল।
৩. বিশেষায়িত নিউজ পোর্টাল।
৪. মিশ্র নিউজ পোর্টাল।
সাংবাদিকতার কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা পরিচয় ব্যতিরেকে অনলাইনভিত্তিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যখন কেউ তার চারপাশের ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা, বিষয় সম্পর্কে নিজস্ব মতামত কিংবা সঠিক তথ্য-উপাত্ত লেখনী, তথ্যচিত্র, ইনফোগ্রাফিক্স, খুদেবার্তা, অডিও, ভিডিও বা অন্য কোনোভাবে জনস্বার্থে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশ করে, তখন তাকে জনসাংবাদিকতা বলা হয়। সিটিজেন জার্নালিজমের মাধ্যমে একজন সচেতন নাগরিক তাঁর নিজের জ্ঞান ও সৃজনশীলতা সমাজের প্রয়োজনে নিয়োজিত করতে পারেন।
বিজ্ঞাপননির্ভর বাণিজ্যিক মডেলে পরিচালিত মূলধারার গণমাধ্যমের একাংশের আধেয় তৈরি ও প্রচারের নানা মাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাবমুক্ত নাগরিক সাংবাদিকতা আজ সাধারণ মানুষের কাছে প্রকৃত মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত। ক্ষেত্রবিশেষ মালিকপক্ষের স্বার্থ, বহুজাতিক কোম্পানিসহ বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদমূল্য ও এজেন্ডা সেটিংয়ের মতো প্রচলিত ধারার গেটকিপারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালনের সুযোগ অপেক্ষাকৃত কম থাকায় নাগরিক সাংবাদিকতার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে গণমানুষের স্বার্থে কাজ করার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গণমানুষের খবর ও তথ্য সংগ্রহ, পরিবেশন, বিশ্লেষণ এবং প্রচারে অংশগ্রহণ করাই হচ্ছে সিটিজেন জার্নালিজম বা নাগরিক সাংবাদিকতা। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এবং ডটকম ধারণার আবির্ভাব মূলধারার গণমাধ্যমের আধেয় উপস্থাপনের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করে। জ্য রোসেনসের মতে, প্রচলিত মূলধারার গণমাধ্যমে যারা পাঠক, দর্শক ও শ্রোতা, তারাই হচ্ছেন নাগরিক সাংবাদিকতার নীতিনির্ধারক তথা সাংবাদিক, মালিক ও সম্পাদক। একসময় যারা শুধু গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত তথ্য তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভর । করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত, তথ্যপ্রযুক্তির অপার সম্ভাবনার এই সময়ে তারাই । সংবাদ তৈরি ও প্রচার করছে।
নাগরিক সাংবাদিকতার একটি গুরত্বপূর্ণ দিক ত হলো- এটিকে নির্দিষ্ট ভৌগোলিক কোনো সীমারেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ বা তি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। নির্দিষ্ট ভাষাভাষীর সবারই বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ত বসে তার চারপাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তুলে ধরতে পারেন, প্রতিবাদ চা জানাতে পারেন কিংবা একাত্মতা ঘোষণা করতে পারেন।
বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যম যেমন- সিএনএন, বিবিসি, টি আলজাজিরার মতো মূলধারার গণমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রেই নাগরিক না সাংবাদিকতার ওপর নির্ভর করছে। সংবাদ-সূত্র হিসেবে নাগরিক সাংবাদিকদের ব্যবহারের পাশাপাশি অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিটি প্রতিবেদনের শেষাংশে ঘটনাস্থলের আশপাশের পাঠককে তাঁদের মতামত বা মন্তব্য তুলে ধরতে অনুরোধ করছে। আর সাম্প্রতিক এই ধারা থেকে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত অনেক সংবাদই প্রথমে ছড়িয়ে পড়েছিল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট পিসির মতো ইলেকট্রনিকস প্রযুক্তি ব্যবহার করে যখন কেউ যে কোনো স্থান থেকে সংবাদ সংগ্রহ, সম্পাদনা ও প্রচারের কাজ করেন, তাকেই ‘মোবাইল সাংবাদিকতা’ বা সংক্ষেপে মোজো বলা হয়। মোবাইল সাংবাদিকতা বর্তমানে দ্রুত ও জনপ্রিয় একটি সংবাদমাধ্যম, যার সহায়তায় প্রতিবেদক বিভিন্ন ধরনের বহনযোগ্য ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহার করে এবং ইন্টারনেটের সহায়তায় সংবাদ তৈরি, সম্পাদনা ও নিজের কমিউনিটিতে দ্রুত ভাগাভাগি করতে পারে। একজন প্রতিবেদকের মতোই ক বিভিন্ন সময়ে মোবাইল সাংবাদিক, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকও হতে পারেন, যিনি এই ডিজিটাল ক্যামেরা এবং ক্যামকর্ডার, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, স্মার্টফোন অথবা ক ট্যাবলেট কম্পিউটার ব্যবহার করেন নিজের কাজের জন্য। এক্ষেত্রে একটি । দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ কিংবা মোবাইল নেটওয়ার্কের সাহায্যে ইন্টারনেট ন ব্যবহার করে নিজের সংবাদ ও ছবি প্রকাশের জন্য পাঠিয়ে থাকেন মোবাইল জ সাংবাদিক। ২০০৫ সাল থেকে মোজো বা মোবাইল জার্নালিজম ব্যবহৃত ক হচ্ছে। যার শুরুটা হয়েছিল পোর্ট মেয়ারস নিউজপ্রেস থেকে। পরে এ না পরিভাষাটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের গাননেট নিউজপেপারের মাধ্যমে।
সাংবাদিকতায় লেগেছে প্রযুক্তির চেলেঞ্জ
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগের মাধ্যম অনেক। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন। যার কাছে যে মাধ্যমটা বেশী নির্ভরযোগ্য মনে হয় সে সেই মাধ্যমেই যোগাযোগ রক্ষা করেন।যোগাযোগের বিভিন্ন রকমফের থাকলেও গ্রহনযোগ্যতা, প্রয়োজনীয়তা, বিশ্বাষযোগ্যতা এবং সহজলভ্যতার উপার ভিত্তি করে মানুষ তার যোগাযোগের মাধ্যম নির্বচন করে থাকে।তথ্য আদান প্রধান বা যোগাযোগের যে সকল নির্ভরযোগ্য মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম গুলো হল:-
১. ইলেকট্রনিক মিডিয়া,
২. প্রিন্ট মিডিয়া,
৩.ফেসবুক এবং
৪. বাংলা ব্লগ
১. ইলেকট্রনিক মিডিয়া :যোগাযোগের এ মাধ্যমটি বেশ জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী। যদিও শুধু তথ্য প্রধান করা ছাড়া এর আর কোন কাজ নেই। চলমান ঘটনার সাধরনের মধ্যে তাৎক্ষণিক ভাবে পৌছে দেয়ার জন্য এর তৎপরতা চোখে পরার মত। তবে তাৎক্ষনিক ভাবে প্রচারিত সংবাদের উপর কোন মন্তব্য করা যায় না।অবশ্য পরেও মন্তব্য করার তেমন কোন ক্ষেত্র নেই। তবে হালে সরাসরি কিছু অনুষ্ঠান হয় যাতে তাৎক্ষনিক মন্তব্য করা গেলেও সুযোগ খুবই সীমিত।
২. প্রিন্ট মিডিয়া : হাল জমানায় অনেকটা অকেজ মনে হলেও এর জনপ্রিয়তা বা মিডিয়া জগতে এর প্রয়োজনীয়তা এতটুকু কমেনি।সংঘঠিত ঘটনার বিবরণ সহ পাঠকদের কাছে পৌছে দিতে এর ভূমিকা অতুলনীয়। যুগের পরিবর্তনের সাথে উপস্থাপনার ঢং পরিবর্তন হলেও এর আবেদন ঠিক আগের মতই। প্রকাশিত খবরের সত্যতার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রিন্ট মিডিয়ার গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।উল্লেখ্য প্রকাশিত খবরের বিষয়ে যে কোন প্রকার মন্তব্য করার জন্য পাঠকদের সুযোগ সুবিধা তেমন নেই।
৩. ফেসবুক : হালে ক্রেজ ফেসবুক। এই বিষয়ে তেমন কিছু বলার প্রয়োজন নেই।ব্যবহারকারীরা ইচ্ছে মত নিয়ন্ত্রন করতে পারেন প্রকাশিত সংবাদ। প্রকাশিত সংবাদের দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির। এটা নিয়ন্ত্রনের জন্য নির্ধারিত সংস্থা নির্ধারিত পন্থায় নিয়ন্ত্রন করে থাকে।
৪. বাংলা ব্লগ : বর্তমান যুগে যোগাযোগের বা মত প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ব্লগ। যে কেউ যেভাবে খুশি তার মত প্রকাশ করতে পারেন। প্রকাশিত মতের উপর ক্ষেত্র বিশেষ যে কেউ মন্তব্য করতে পারেন এবং প্রদত্ত মন্তব্যের প্রতিউত্তরও দিতে পারেন।তবে ফেসবুকের কারনে এর জনপ্রিয়তা কমছে বলে কেউ কেউ মন্তব্য করলেও আমি তাদের সাথে এক মত নই। কারণ ফেসবুকে প্রদত্ত পোস্টে কেবল তারাই দেখতে বা মন্তব্য করতে পারে যারা সংশ্লিষ্ট পোস্টদাতার বন্ধুতালিকায় আছে।কিন্তৃ ব্লগে নিবন্ধিত সদস্যরা ইচ্ছে করলেই প্রদত্ত পোস্টে মন্তব্য করতে পারে।
দিন যতই যাচ্ছে তেমনি প্রযুক্তির ছোঁয়া যেমন উন্নতির দিকে যাচ্ছে, তেমনি অবনতি ও কোন অংশে কম নেই —
সংবাদের জগতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো ভুয়া সংবাদ বা গুজব রটানো। প্রযুক্তির সহজলভ্যতার সুযোগ নিয়ে একদল কুচক্রী মহল ভুয়া খবর রটায়। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমগুলোয় এই অপতৎপরতা বেশি লক্ষণীয় হচ্ছে। সামাজিকমাধ্যমে ফিল্টারিং বা গেটকিপিংয়ের কোনো সুযোগ না থাকায় সহজে এটি ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক সময় সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সংবাদের সূত্র ধরে মূলধারার গণমাধ্যমগুলো সংবাদ প্রচার করে কোনো ধরনের যাচাই ছাড়াই। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় ভুয়া খবর প্রকাশিত হওয়ার প্রকোপ দেখা যায়। আর ভুয়া খবর ঠেকাতে ফেসবুক, টুইটারসহ নানা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রকল্প বা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় নাসির হোসেন ছোট বোনের সঙ্গে তোলা একটি সেলফি তার অফিসিয়াল পেজে পোস্ট করেন। একপর্যায়ে কিছু মানুষের নোংরা মন্তব্যের কারণে নাসির হোসেন সেই পোস্ট মুছে দিতে বাধ্য হন। এক সময় নায়করাজ রাজ্জাক মারা গেছেন বলে ফেসবুকে প্রচারণা চালানো হয়। এ খবরে প্রবীণ এই শিল্পী তখন মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছিলেন। ভালো বা খারাপ ঘটনা ঘটাতে মাধ্যমের নিজস্ব কোনো ভূমিকা থাকে না, বরং যে বা যারা যে উদ্দেশ্যে এটা ব্যবহার করে, তার মাধ্যমেই খারাপ বা ভালো নির্ধারিত হয়। তথ্যপ্রযুক্তির অপার সম্ভাবনার এই যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে অনেক অসাধ্য সাধন করা সম্ভব।
বিশ্বের অনেক সংবাদ সংস্থা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সংবাদ তৈরি করছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংবাদ তৈরি করছে, এর মধ্যে যেমন টিভি চ্যানেলগুলো রয়েছে, একইভাবে রয়েছে সংবাদ সংস্থা বুমবার্গ, রয়টার্সও। অনেকই একে সৃজনশীল সাংবাদিকতার জন্য হুমকি বা বড়ো কোনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই সংবাদের সব কাজ হবে। বর্তমানে সাংবাদিকতা গতানুগতিক ধারার মধ্যে প্রশিক্ষিত হয়ে আসে। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে প্রত্যেকে সাংবাদিক হয়ে যাচ্ছে এবং সিটিজেন জার্নালিজমের কারণে তারা নিজেদের সাংবাদিক দাবিও করছে। তবে মূলধারা সেটিকে চ্যালেঞ্জ করছে এই জায়গা থেকে যে সোশ্যাল মিডিয়ার সংবাদ সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ হচ্ছে না। কেবল টেক্সট, অডিও বা ভিডিও ছাড়িয়ে সাংবাদিকতা এখন পৌঁছে গেছে মাল্টিমিডিয়ার দ্বারপ্রান্তে। সব ধরনের মাল্টিমিডিয়া এবং লাইভ সম্প্রচার নিয়ে যখন বার্তাকক্ষ কাজ করবে, তখন একজন সাংবাদিককেও এসব মাধ্যমে কাজের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, এটাই বাস্তবতা। বর্তমানে পাঠক-দর্শকের চাহিদার কারণেই সাংবাদিকতার ধরন বদলে যাচ্ছে। মানুষ এখন একই সঙ্গে পড়তে, দেখতে ও শুনতে চায়। ফলে গণমাধ্যমের বিকল্প কিছু ভাবার সুযোগ নেই। মাল্টিমিডিয়ার এই ব্যবহার আমাদের জন্য ভালো। তবে দক্ষতার সঙ্গে না করতে পারলে তা বুমেরাং হয়ে যাবে। এসব অনলাইন পত্রিকার সংবাদ পড়ে পাঠক বিভ্রান্ত হন। বিরক্ত হয়ে পুরো অনলাইন গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন। ডোমেইনের দাম কম হওয়ায় আজকাল প্রায় ঘরে ঘরে অনলাইন পোর্টাল। অনলাইন পত্রিকার প্রকাশক-সম্পাদক হিসেবে নিজেকে জাহির করার একটা প্রবণতা এই সময়ে খুব বেশি করে চোখে পড়ছে। সাংবাদিকতা নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি আত্মস্থ করানোর দায়িত্ব মিডিয়া হাউসগুলো যেমন নেবে, তেমনই এই ধারণাগুলোর জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সিলেবাসে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করবে। কেননা পুরোনোরা নতুন যে কোনো কিছু গ্রহণে ‘কালচারালি শকড’ হয়। ফলে নতুনদের মধ্য দিয়ে এটি বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে।
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.