‘মোঘল-এ-আযম’ মুক্তি পায় ১৫ অক্টোবর, শুক্রবার। শুধু বিগ বাজেটের জন্যই নয়, নানা কারণেই এটি ঢালিউডের একটি বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ছিল।
২০০৩ সালে ছবিটির শুটিং শুরু হয়েছিল, শুটিং শেষ করতেই সময় নিয়েছে ৪ বছর আর মুক্তি পায় শুভ-মহরতের সাত বছর পর। প্রয়াত নায়ক মান্না অভিনীত সর্বশেষ ছবি এটি।
মৃত্যুর কিছুদিন আগে মান্না এ ছবিতে তার অংশের অভিনয় ও ডাবিং শেষ করেছিলেন।
মিজানুর রহমান দীপু (এমপি) পরিচালিত ও প্রযোজিত এ ছবিটি নিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতূহল।
আর অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাছে ‘মোঘল-এ-আযম’ ছিল স্বপ্নের ছবি।
ভারতের দিলীপ কুমার আর মধুবালা অভিনীত অবিস্মরণীয় ছবি ‘মোঘল-এ-আযম’ দেখেছেন বাংলাদেশের অনেক দর্শক।
কে আসিফ পরিচালিত ১৯৬০ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি ভারতের সর্বকালের সর্বাধিক সফল ও জনপ্রিয় ৫টি ছবির তালিকায় জায়গা করে আছে। এই ছবিটি দেখেই পরিচালক-প্রযোজক মিজানুর রহমান দিপু অনুপ্রাণিত হন বাংলাদেশে ‘মোঘল-এ-আযম’ নির্মাণের। শুরুতে তার পরিকল্পনার কথা শুনে ঠোঁট উল্টেছিলেন অনেকেই। মুম্বাইতে যে জাঁকজমকভাবে ছবিটি তৈরি হয়েছে, তার ধারেকাছে পৌঁছানো সহজ কথা নয়। কিন্তু নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য মরিয়া মিজানুর রহমান দীপু শুরুতেই দু হাত মেলে ছবিটির পেছনে শুরু করেন বিনিয়োগ। সেলিম চরিত্রে মান্না আর আনারকলি চরিত্রে শাবনূরকে কাস্ট করেন তাদের তৎকালীন সম্মানীর দ্বিগুণ অর্থে। অভিজ্ঞ অভিনেতা সোহেল রানাকে বাদশাহ আকবর চরিত্রে কাস্ট করার সময় তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে নির্মাতা বলেছিলেন, এ ছবির জন্য আমি আমার সব সহায়-সম্পত্তিও খরচ করতে প্রস্তুত। আপনি শুধু এ ছবির অভিনেতাই নন, আমার পরামর্শক। ছবির কোথায় কী প্রয়োজন আমাকে পরামর্শ দেবেন। বাস্তবেও প্রযোজনায় মিজানুর রহমান দীপু বিন্দুমাত্র ঘাটতি রাখেননি। যে টাকা তিনি খরচ করেছিলেন শুধু ছবির সেট ও পোশাক তৈরির কাজে, তা দিয়েই অনেক নির্মাতা ছবির সম্পূর্ণ কাজ শেষ করেন।
সোহেল রানার মতে, একটি ঐতিহাসিক ছবির পেছনে এতো বিনিয়োগ বাংলাদেশে প্রোপটে ভাবতেও অবাক লাগে। তিনি বলেছিলেন, আমি অনেক পোশাকি ছবিতে অভিনয় করেছি। কিন্তু আমার অভিনীত সেরা পোশাকি ছবি ‘মোঘল-এ-আযম’।
ছবিটি নিয়ে আশাবাদী ছিলেন প্রয়াত নায়ক মান্না । একই ধরনের গৎবাঁধা কাহিনীতে অভিনয় করতে করতে যখন তিনি কান্ত, ঠিক সেই সময় তার কাছে আসে ‘মোঘল-এ-আযম’ ছবির প্রস্তাব। স্বাভাবিকভাবেই দিলীপ কুমারের করা যুবরাজ সেলিম চরিত্রটিতে নিজের অভিনয় নিয়ে তিনি ছিলেন বেশ সিরিয়াস। ছবিটিতে অভিনয়ের একপর্যায়ে মান্না এতোটাই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন যে, সম্মানী নিতেই অস্বীকার করেন। যদিও পরিচালক-প্রযোজক তাতে সম্মত হননি। মান্না খুব আশা করেছিলেন এ ছবির মধ্য দিয়ে তার অভিনয় জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজের স্বীকৃতি পাবেন। ছবিটি মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারেও তিনি বার বার তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি থাকায় এবং নির্মাতার ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে ছবিটি মুক্তি দিতে এতো দীর্ঘসময় লেগেছিল।
বিশাল ফিল্মসের ব্যানারে ‘মোঘল-এ-আজম’ ছবিতে মান্না, শাবনূর ও সোহেল রানাসহ আরো অভিনয় করেছেন নাসিমা খান, চন্দ্রিমা, টেলি সামাদ, নাসরীন, নাসির খানসহ আরও অনেকে। যুবরাজ সেলিম আর নর্তকী আনারকলির প্রেমকাহিনী নিয়ে নির্মিত এ ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক-প্রযোজক মিজানুর রহমান দীপু নিজেই। ছবির সঙ্গীত পরিচালনায় রয়েছেন আলাউদ্দিন আলী এবং চিত্রগ্রহণ করেছেন রেজা লতিফ।
‘মোঘল-এ-আযম’ ছবির প্রযোজক-পরিচালক মিজানুর রহমান দীপু বলেন, এটি একটি বিগ এরেঞ্জমেন্টের ছবি। তাই শুটিং শেষ করতেই বছর তিনেক লেগে যায়। এরপর আমার নানা ব্যস্ততায় ছবিটির কাজ দীর্ঘসময় বন্ধ ছিল। এক পর্যায়ে ভেবেছিলাম কাজটাই শেষ করতে পারবো না। যাই হোক শেষপর্যন্ত ছবিটি দর্শকের কাছে যে পৌছে দিতে পারছি তাতে আমি আনন্দিত। তিনি বলেন, প্রতিটি শিল্পীই এ ছবিতে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। সোহেল রানা, মান্না আর শাবনূর নিজেদের অভিনয় মেধার স্বার রেখেছেন এ ছবিতে। ছবিটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহী ছিলেন প্রায়াত নায়ক মান্না। দুর্ভাগ্য তিনি ছবিটি দেখে যেতে পারলেন না।
কার্টেসি – আহমেদ ইমতিয়াজ কাওসার