1. admin2@dailysmtv24.com : admin :
  2. admin@dailysmtv24.com : admin :
শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:০৮ পূর্বাহ্ন

গহনায় ইমিটেশন, তারুণ্যের পছন্দের শীর্ষে

জামশেদ আলম সুজন
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১৫ Time View

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গা ঘেঁষে তুরাগ নদের পাড়ে দেশের ছোলে বাজার।  এখানে আসলেই কানে আসবে গহনা তৈরির কারিগরদের হাতুড়ির টুংটাং শব্দ। আনমনে গহনা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। বাজারেই গহনার কাজ করছে অনেক মানুষ। তবে এখানে বসে কাজের শেষ পর্বটি সারা হয়। মূল কাজের শুরুটা বাড়ি থেকেই হয়ে আসে। মহাসড়ক ছেড়ে স্টিলের সেতু পার হলেই পরশ মিলবে অলঙ্কার গ্রামের। দুই পাশে সবুজ গাছের বন্ধনীর মাঝে সরু পিচঢালা আঁকাবাঁকা পথ। সামনে যেতে পড়বে ছোট ছোট বাজারঘাট। এখানেই অনেক গ্রাম ভাকুর্তা, কান্দিভাকুর্তা, হিন্দুভাকুর্তা, মোগরাকান্দা, মুশুরীখোলা, ডোমরাকান্দা, বাহেরচর, ঝাউচর, লুটের চর, চুনার চর, চাপড়া ও চাইরা। এসব গ্রামের প্রায় আট হাজার নারী-পুরুষ গহনা তৈরির কাজে যুক্ত। প্রায় বাড়িতেই দেখা মিলবে অলঙ্কার তৈরির দোকানপাটের। তাছাড়া নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এসব কাজ নিয়ে ব্যস্ত।

এখানের কারিগরদের হাতের ছোঁয়াতে তৈরি হচ্ছে নিখুঁত ও বাহারি কারুকাজের নানা অলঙ্কার। দেড়শ বছরের বেশি সময় ধরে সবুজ ঘেরা এই গ্রামগুলোয় গহনা তৈরির কাজে যুক্ত স্থানীয়রা। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করেন গলার হার, হাতের চুড়ি, কানের দুল, ঝুমকা, চেইন, পায়েল ও নূপুরসহ বিভিন্ন ডিজাইনের গহনা। এখানকার তৈরি গহনার চাহিদা বাংলাদেশ জুড়েই। এ ছাড়া বড় বড় প্রতিটি শপিংমলে যে সব ইন্দোনেশিয়া বা ভারতের বলে বিক্রি করা হয়, সেসবও এখানে তৈরি হয় বলে জানালেন ছোলে বাজারের কারিগর লক্ষ্মণ দাস। কথা হয় ভাকুর্তা গ্রামের নিত্যানন্দ সরকারের সঙ্গে। কয়েক প্রজন্ম ধরে গহনা তৈরির কাজ করছেন তারা। এখন এ ব্যবসার অবস্থা আগের মতো নেই বলে জানালেন তিনি। বলেন, এক সময় এসব গ্রামে শুধুই রুপার কাজ হতো। এখন বিভিন্ন মেটালের কাজ হয়। রুপার তৈরি অলঙ্কারের বেশ চাহিদা থাকলেও এখন তা তামা-পিতলের দখলে চলে গেছে। বয়ঃবৃদ্ধ শুকচাঁদ দাস কথা প্রসঙ্গে বলেন, ৮০-এর দশকে এসব বাজারে শুধুই সোনা ও রুপার গয়না তৈরি হতো। কিন্তু কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও উপযুক্ত মজুরি না পাওয়াসহ নানা কারণে ৯০-এর দশকের পর থেকে কারিগররা রুপার অলঙ্কার তৈরি থেকে সরে আসেন; যা পরে ইমিটেশনের গহনা তৈরিতে রূপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে কথা বলে জানা যায়, এখানে যারা প্রথম গহনা তৈরির কাজ শুরু করেন তার হিসাব করলে এ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রায় দেড়শ বছরের ইতিহাস (পূর্বপুরুষের পেশার সূত্র ধরে এ হিসাব করা যায়)। এক সময় এ গ্রামের প্রায় সব পরিবারের পেশা ছিল স্বর্ণ কারিগরি। এরা জীবিকা নির্বাহে রাজধানীর সোনার বাজার তাঁতীবাজারে কারিগর হিসেবে কাজে করতেন। হঠাৎ স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় ভাটা পড়ে। এ সময় অনেকেই বেকার হতে থাকে। ফলে জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে পড়ে কারিগরদের। আয় উপার্জন কমে যাওয়ায় তারা শহর থেকে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন। কিন্তু সমস্যা হলো গ্রামে ফিরলেও এই কাজ ছাড়া অন্যকিছু তারা জানতেন না। পরে তারাই শুরু করেন কম পুঁজিতে রুপার গহনা তৈরির কাজ। কম খরচে নান্দনিক কাজের অলঙ্কার তৈরিতে ক্রেতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায় তারা। ভাকুর্তা গ্রামটিতে এভাবেই রুপার গহনার কাজ শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে বদলে যায় এলাকার নাম, যশ বদলে যায় অর্থনীতিও।

এখন বেশিরভাগ কারিগর ঝুঁকে পড়েছেন ইমিটেশনের গয়না তৈরির দিকে। তামার ব্যবহার বেশি হলেও পিতল ও দস্তা দিয়েও গয়না তৈরি করেন এই কারিগররা। গহনা তৈরির কাঁচামাল তামা কিনে আনা হয় ঢাকার তাঁতীবাজার থেকে। এ ছাড়া কিছু গহনার কাঁচামাল বগুড়া ও ভারত থেকে আনা হয়। নিজেদের দক্ষতা ও পরিশ্রম দিয়ে কাজ করেন অধিকাংশ কারিগর। শুধু দেশে নয়, এখানকার গহনা সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। মূলত উৎসব ও বিশেষ কোনো দিবস কেন্দ্র করে এর চাহিদা বেড়ে যায়।

গহনা তৈরির কাজটি আগে হিন্দুরা করতেন। এখন মুসলমানরাও এই পেশায় যুক্ত হয়েছেন। গহনা তৈরিতে লাভ কেমন জানতে চাইলে আনন্দ সরকার বলেন, দাম ডিজাইন ও আকারের ওপর নির্ভর করে। ৩০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত দামের হেরফের হয়। তবে পাইকাররা বড় বড় মার্কেটে দুই গুণ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিন গুণ পর্যন্ত বেশি মূল্যে বিক্রি করেন। তবে দিনে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করে আয় হয় মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

এক সময় এ বাজারে প্রায় ৩ শতাধিক দোকান থাকলেও এখন কমে আছে তার অর্ধেক। দুই একটি দোকান ছাড়া রুপার গহনা তৈরি হয় না বললেই চলে। এমনকি দীর্ঘ সময় পার হলেও ভাগ্য বদলায়নি গহনা তৈরির কাজে জড়িত পরিবারগুলোর। দুই চারটি ইটের ভবনের দেখা মিললেও অধিকাংশ ঘরবাড়ি এখনো জরাজীর্ণ।

দেশের বিভন্ন জেলা থেকে আসা খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, দিন দিন তামা পিতলের গহনার চাহিদা বাড়ছে। ফলে স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি দোকানে এখন তামা পিতলের অলঙ্কারও গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই এখান থেকে পাইকারি কিনতে আসা। আবার ক্রেতার চাহিদা অনুসারে ডিজাইন দিয়ে অলঙ্কার তৈরি করে নিই।

রুপার গ্রামের অলঙ্কার তৈরির কারিগর আলমগীর কবির জানান, সময়ের ব্যবধান আর ক্রেতাদের চাহিদার কারণেই নাকি ব্যবসায়ীরা উপকরণ বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। খরচের পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীর প্রতারণা থেকে বাঁচতে ক্রেতার কাছে রুপার বদলে দখল করে নিয়েছে তামা আর পিতল। এখন কারিগররা আগের মতো মূল্যায়ন ও পারিশ্রমিক পান না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে পেশা পরিবর্তন করছেন। পেশা বদলের এ চিত্রটা সুখকর নয়। তারপরও সংকট সবার একরকম নয়। কেউ কেউ অনেক সংকটের মধ্যেও এই পেশা আগলে রেখেছেন জীবিকা ও পিতৃপুরুষের টানে।

লেখক : কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক। 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category

© All rights reserved © 2025 Coder Boss

Design & Develop BY Coder Boss