1. admin2@dailysmtv24.com : admin :
  2. admin@dailysmtv24.com : admin :
বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫০ অপরাহ্ন

বায়োস্কোপ : হারিয়ে গেছে জাদুর সেই বাক্সটি

মেজবাহ উদ্দিন খোকন
  • Update Time : বুধবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ২৬ Time View

এসএমটিভি প্রতিবেদক :

শৈশব প্রতিটি মানুষের কাছেই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সময়। বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ হারিয়ে ফেলে শৈশবের আনন্দ। তখন শৈশবের প্রিয় খেলা, শিশুদের ছেলেমানুষি কাজ দেখলে অনেকেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। শৈশবের দুরন্তপনা স্মৃতিগুলো হাতড়ে বেড়ায় বৃদ্ধকাল পর্যন্ত। তেমনি নব্বইয়ের দশকে বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোরদের প্রিয় একটা অধ্যায়ের নাম ‘বায়োস্কোপ’।

নব্বইয়ের দশকের কথা, আমাদের গ্রামে তখনো বিদ্যুৎ আসেনি, আসেনি টেলিভিশন, টেলিফোন, তখন আমাদের আনন্দের একটি মাধ্যম ছিল ‘বায়োস্কোপ’।

গ্রামের মেঠো পথ ধরে মাঝেমধ্যেই লাল পাঞ্জাবি পরে, মাথায় জোকারের মতো লাল টুপি, মুখে আর্ট করে মধ্যবয়সী লোক আসত। কাঁধে থাকত কাঠের বাক্স। শৈশবে তখন বুঝতাম না বাক্সে কী নিয়ে জোকার টাইপের লোকটি ঘুরত। তখন বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করতাম, বাবা ওই লোকের কাঁধের বাক্সে কী আছে? বাবা উত্তর দিত, লোকটির কাঁধে যে বাক্সটি আছে তার নাম বায়োস্কোপ। আবার প্রশ্ন করতাম, বাবা বায়োস্কোপ কী? বাবা বিরক্তহীন উত্তর দিত—বায়োস্কোপের ভেতরে নানান কিছু দেখা যায়, নায়ক-নায়িকাদেরও দেখা যায়। বাবার কাছে শুনতে দেরি দৌড়ে যেতাম বায়োস্কোপ দেখতে।

বায়োস্কোপের ভেতরে চোখ লাগিয়ে একদৃষ্টিতে দেখতে থাকতাম পশুপাখির ছবি, নায়ক-নায়িকার ছবি, তাজমহলের ছবি। আর বায়োস্কোপওয়ালা নানা ঢঙে গান গাইত। দেখা শেষ হলে লোকটি চলে যেত তখন বিষণ্নতা কাজ করত। প্রতিদিনই অপেক্ষা করতাম কবে আবার দেখব, কবে আবার বায়োস্কোপ আসবে। বারবার বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করতাম, জিজ্ঞেস করতেই থাকতাম আর বাবা-মা বলত কালই আসবে। অপেক্ষায় বসে থাকতাম। কত দিন যে বায়োস্কোপ দেখার বায়না করে খাবার খেতাম না হিসাব নেই।

প্রায় প্রতিদিনই আইসক্রিম, হাওয়াই মিঠাই নিয়ে ফেরিওয়ালার ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে গ্রামে আসত আমরা পেছনে পেছনে পুরো গ্রাম দৌড়াতাম। এক টাকা, দুই টাকা, কখনো চুল কখনো প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ক্রয় করতে হতো। তখন আনন্দ আর হাসির মূল্য ছিল এতটুকুই। আর আজ হাজার টাকা দিয়েও শৈশবের হারানো আনন্দ ফিরে পাওয়া যায় না, আনন্দের অনুভূতিও খুঁজে পাওয়া যায় না।

এখন গ্রাম যান্ত্রিকতায়, নিয়নবাতিতে পূর্ণ কিন্তু অপূর্ণ শুধু শৈশবের স্মৃতিগুলো। এখন আর গ্রামের মেঠো পথে বায়োস্কোপ আসে না, আইসক্রিমও হেঁটে হেঁটে বিক্রি করে না, হাওয়াই মিঠাইও গ্রামে ফেরি করে না, এখন আর বন্ধুদের সঙ্গে কাদা-ছোড়াছুড়ি করি না, দৌড়ে গিয়ে পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি করি না, এখন সময় আনন্দহীন, এক শুধু বড় হওয়ার তোড়জোড়।

এখন দিন শেষে একটা কথাই মনে পড়ে ‘শৈশবের স্কুলের বইয়ের ব্যাগের ওজনের চেয়ে এখন বাস্তবতা আর ভাগ্যের জাঁতাকলের ওজনটাই যেন বেশি’। তারপরও মানুষ শৈশবের স্মৃতি ভেবে ভেবে আনন্দ পায়, চোখের কোল ভিজে যাওয়ার মুহূর্ত খুঁজে পায়। এক তৃপ্তির হাসি হাসে কারণ নব্বইয়ের দশকের শৈশবই ছিল নব্য আধুনিকতাহীন এক সহজ-সরল উপায় আনন্দ খোঁজার।

লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category

© All rights reserved © 2025 Coder Boss

Design & Develop BY Coder Boss