আকাশের হাতে আছে এক রাশ নীল,
বাতাসের আছে কিছু গন্ধ
রাত্রির গায়ে জ্বলে জোনাকী
তটিনীর বুকে মৃদু ছন্দ....
এই গানটির সুর, কথা এবং গায়কী যে কারো মনে নাড়া দেয় এখনও। কিংবা রেডিও, টিভি অথবা গ্রামোফোন রেকর্ডে তার সতেজ কন্ঠের আওয়াজ "এমন মজা হয়না, গায়ে সোনার গয়না, বুবুমনির বিয়ে হবে বাজবে কত বাজনা ...’’ এমনি অসংখ্য সব জনপ্রিয় গানের কন্ঠশিল্পী আঞ্জুমান আরা বেগম এর ৮৩-তম জন্মদিনে স্মরণ করি।
আঞ্জুমান আরা বেগম
(১১ জানুয়ারি ১৯৪২ - ২৯ মে ২০০৪)
-------------------------------------
আঞ্জুমান আরা বেগম ১৯৪৩ সালের এই দিনে সিলেটে জন্মগ্রহন করেন। তার দু’ভাই এবং পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি সবচেয়ে ছোট ছিলেন।
আঞ্জুমান আরার পিতা ডা. নাসিরউদ্দিন তালুকদার অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়মিত ঔষধ সরবরাহ ও প্রয়োজনে খাদ্য ও আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আর্মীরা উনাকে গ্রেফতার করে মেরে ফেলে। তাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন।
আঞ্জুমান আরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েশন করেন। শিল্পীর বড়বোন বেগম জেব উন নেসা জামাল ছিলেন একজন জনপ্রিয় গীতিকার। আরেক বোন মাহবুব আরা ছিলেন স্বনামধন্য রেডিও ও টেলিভিশনের শিল্পী।
প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী জিনাত রেহানা তার ভাগ্নি এবং রুনা লায়লা তার আপন চাচাতো বোন। ষাট দশকের শুরুতে যখন টেলিভিশন ছিল না, তখন আঞ্জুমান আরা বেগম রেডিওতে প্রতিমাসে কমপক্ষে তিনটি অনুষ্ঠান করতেন।
প্রতি অনুষ্ঠানে তিনি সকাল, বিকাল ও রাতে শ্রোতাদের জন্য আধুনিক, নজরুল সংগীত, লোকগীতি, সেমি-ক্লাসিক্যাল, দেশাত্মবোধক, গজল ও গীতের ডালি নিয়ে আসতেন।
সেই সময় মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু করেন। তার গাওয়া চলচ্চিত্রের অনেক গান দ্রুত শ্রোতাদের হৃদয়ে রেখাপাত করে। একই সাথে উর্দু চান্দা চলচ্চিত্রের ‘চান্দনী ভিগি ভিগি হাওয়া’ প্রচুর শ্রোতাপ্রিয় হয়।
কণ্ঠশিল্পী আঞ্জুমান আরার গত চার দশকে বাংলা চলচ্চিত্রের অসংখ্য কালজয়ী ভালোবাসার গান রয়েছে।যা আজও শ্রোতা হৃদয়ে জাগরুক হয়ে রয়েছে।
“তুমি আসবে বলে কাছে ডাকবে বলে ভাল বাসবে ওগো শুধু মোরে” সুতরাং চলচ্চিত্রের এই গানটিও গেয়েছিলেন আঞ্জুমান আরা বেগম। কালজয়ী এমনি অসংখ্য গান মানুষের হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকবে।
কণ্ঠশিল্পী আঞ্জুমান আরার সুভাষ দত্তের সুতরাং এর এই গান সহ আরো বহু চলচ্চিত্রের চিরসবুজ এমন অনেক গানই নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা এখনও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাইছেন।
মিষ্টি কথা ও শ্রুতিমধুর সুর হওয়ায় এই সময়ে এসেও শ্রোতার মনে গানগুলো নতুনভাবে দৌলা দিচ্ছে। এসব গানের আবেদন আজীবনই শ্রোতাদের প্রাণে বাজবে।
প্রিয় শিল্পী আঞ্জুমান আরা বেগমের স্বামী মাসুম আলম সিদ্দিকীও সবসময় তাকে উৎসাহ দিতেন। তার ছেলে তারেক মাসরুর ও মেয়ে উমানা এ্যাঞ্জালিন স্ব স্ব ক্ষেত্রে আজ প্রতিষ্ঠিত।
আঞ্জুমান আরা বেগম প্রচুর পুরস্কার পেয়েছিলেন। ২০০২ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী তাকে গুণীজন সম্মাননা প্রদান করে। ২০০৩ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।
আঞ্জুমান আরা পরে হজ্জ্ব করার পর তিনি অনেকটা নিভৃতচারী হয়ে যান এবং এক সময় গান রেকর্ডিং বন্ধ করে দেন।
শিল্পী আঞ্জুমান আরা এক সময় কঠিন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ থাকাবস্থায় ২০০৪ সালের মে মাসে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্য: উইকিপিডিয়া