নিজস্ব প্রতিবেদক :
চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় গত ১২ মে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম দায়িত্ব নেন আরও দুই দিন পর ১৫ মে। এর আগ পর্যন্ত পরীক্ষাসংক্রান্ত কার্যক্রমে যুক্ত না থেকেও তিনি সম্মানী বাবদ ৮৪ হাজার ৯৪৭ টাকা নিয়েছেন। দায়িত্ব পালন না করে তাঁর এই টাকা নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনের মাধ্যমে প্রতিবছর ৮টি করে ১৬টি সম্মানী পান। এর মধ্যে পরীক্ষার্থীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করলে মূল বেতনের অর্ধেক, পরীক্ষার প্রবেশপত্র বিতরণের পর অর্ধেক, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর মূল বেতনের সমপরিমাণ ও ফলাফল প্রকাশের পর মূল বেতনের অর্ধেক সম্মানী দেওয়া হয়। এর বাইরে ব্যবহারিক পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই, পুনর্নিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশ, নম্বরপত্র ও সনদ বিতরণ করলে বিভিন্ন অনুপাতে আরও চারটি সম্মানী পান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বোর্ডের নথিতে দেখা গেছে, ব্যবহারিক পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই ও পরীক্ষা শেষ করায় দুটি সম্মানী বণ্টনের জন্য তৎকালীন চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র নাথ বরাবর আবেদন করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর। ১৪ মে এ আবেদন করা হয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওই দিনই আবেদনপত্র অনুমোদন করে সম্মানী বণ্টনের জন্য হিসাব ও নিরীক্ষা শাখার উপপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠান। পাশাপাশি ১৪ মে অধ্যাপক রেজাউল করিমকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তিনি ১৫ মে যোগ দিয়ে পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজের সম্মানী বাবদ মূল বেতনের অর্ধেক ৩২ হাজার ৩০ টাকা গ্রহণ করেন। ১৬ মে এ টাকা বণ্টন করা হয়।
বোর্ডের প্রণোদনা বণ্টনবিষয়ক একটি নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার মোট ব্যবহারিক উত্তরপত্রের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫১ হাজার ৭০৪। প্রতি উত্তরপত্র বাবদ ৫ টাকা হারে ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫২০ টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বণ্টন করা হয়। চেয়ারম্যান রেজাউল করিম চৌধুরী সম্মানী পেয়েছেন ৫২ হাজার ৯১৭ টাকা। ১১ জুন অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এ টাকা পান চেয়ারম্যান।
সবশেষ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) প্রতিবেদনের জন্য তথ্য ও মন্তব্য চাওয়ায় প্রতিবেদক শারমিন রিমার সঙ্গে আশোভন আচরণের অভিযোগ উঠে অধ্যাপক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সচিব থাকাকালীন ওএমআর শিট সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ‘হাতে হাতে টাকা’ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন অধ্যাপক রেজাউল করিম। শাস্তি হিসেবে তাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) চট্টগ্রাম অঞ্চলে বদলি করা হয়। এরপর নানা ফন্দিফিকির করে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সুপারিশে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান হয়ে ফিরে আসেন তিনি।
চেয়ারম্যান হয়ে ফেরার পর কোথায় অস্থিতিশীল হয়ে থাকা শিক্ষাবোর্ডে শান্তি ফেরাবেন। উল্টো যোগদান করতে না করতেই বোর্ডে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। এক কর্তা অন্য কর্তার গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়ে চলে কাদা ছোড়াছুড়ি। নওফেলের ছত্রছাঁয়ায় চেয়ারম্যান রেজাউল হয়ে উঠেন আরও বেপরোয়া। পরীক্ষার দায়িত্ব পালন না করেও তুলে নেন অর্ধ লাখ টাকা।
সেই রেজাউল আবারও বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য ঢাকায় ধরনা দেওয়ার খবর চাউর হয়েছে।
সূত্র জানায়, শিক্ষা বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ দুটি তদন্তের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে। আর এই কাজে তাকে উপসচিব মো. বেলাল হোসেন সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা বোর্ডে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়। এর ফলে কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। এসব অভিযোগের পর উপসচিব বেলালকে বোর্ড থেকে সরিয়ে নিলেও স্বপদে বহাল রয়েছেন চেয়ারম্যান রেজাউল। তদবির করছেন পুনরায় চেয়ারম্যান হওয়ার।
চলতি সপ্তাহে শূন্য হচ্ছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ। বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিমের চাকরির বয়স শেষ হওয়ায় পদটি খালি হচ্ছে। আট মাস দায়িত্ব পালন শেষে চলতি মাসের ৩১ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরোত্তর ছুটিতে যাচ্ছেন তিনি। তবে অবসরে যাওয়ার সুবিধার্থে বোর্ড থেকে ২৯ তারিখে রিলিজ নেবেন বোর্ডের এ কর্মকর্তা। যদিও পিআরএলে যাওয়ার দশ দিন আগেই গত ২১ জানুয়ারি প্রেষণ প্রত্যাহার করে তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়।
গুঞ্জন উঠেছে চুক্তিভিত্তিক বোর্ড চেয়ারম্যান হতে দৌড়ঝাঁপ করছেন বর্তমান বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম। ইতিমধ্যে তিনি কয়েকজন শীর্ষ রাজনীতিবিদের সুপারিশও নিয়েছেন।
এসব বিষয়ে জানতে বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে, চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্র-জনতা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাছির উদ্দিন বলেন, স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর তার দোসররা নানা ভাবে সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন। তাদের নানা অপতৎপরতায় দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। তাদের অপসারণ না করলে বোর্ডসহ দেশে বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকবে।