দেবী শেঠি ভারতের অন্যতম প্রথিতযশা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। তাঁর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পরে প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী মান্না দে ডাক্তারবাবুকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বললেন তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিলটি পেলে তিনি টাকাপয়সা দিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারেন। রসিক মানুষ ডাঃ শেঠি, জানিয়ে দিলেন এখুনি তাঁর বিল পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
সামান্য কিছু মুহূর্ত অপেক্ষার পরে হাসপাতালের একজন এলেন হাতে লম্বা একটা বড় বিল। কিন্তু সেই বিল দেখে মান্না দে হতবাক। ডাঃ শেঠি একটি পয়সা নিলেন না,সব খাতে লেখা শূন্য। অভিভূত হয়েছিলেন সংগীতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, বলেছেন মানুষের এমন প্রাণধালা ভালবাসা পাওয়ার সৌভাগ্য কতজনের হয়।
সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই আমাদের দেশে যারা হার্টের অসুখে আক্রান্ত রোগী ও তাঁর স্বজনদের বেশিরভাগ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন ডাঃ শেঠি একবার দেখলে রোগী দীর্ঘদিন সুস্থ্য ভাবে জীবন যাপন করবেন। কার্যত ভারতে হার্টের চিকিৎসায় ডাঃ দেবী শেঠি একজন ধন্বন্তরী চিকিৎসক। এই কার্ডিওলজিস্টকে রীতিমতো 'ভগবান'-এর জায়গা দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় তৎকালীন দক্ষিণ আফ্রিকার সার্জেনের হার্ট সার্জারির কথা শুনে প্রথম কার্ডিয়াক সার্জেন হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
১৯৯১ সালে তিনি নয় দিন বয়সের একটি শিশুর হৃৎপিণ্ড অপারেশন করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন গোটা ভারতে। সম্ববত সফল ওই অস্ত্রোপচার ভারতে প্রথম সফল শিশু হৃৎপিণ্ড অস্ত্রোপচার।এরপর চিকিৎসক জীবনে একাধিক অসাধ্যসাধন করে দেখিয়েছেন ডা: দেবী প্রসাদ শেঠি।
মান্না দে তখন ব্যাঙ্গালোরে অধুনা (বেঙ্গালুরু)
হঠাৎ একদিন আচমকা বুকে ব্যাথা অনুভব করেন ।আগে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে তাঁর হার্টের বাইপাস অপারেশন হয় ১৯৯১ সালে। যথেষ্ট সুস্থ্য ছিলেন কিন্তু ব্যাঙ্গালোরে হঠাৎ করে বুকে ব্যাথা অনুভব করায় কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাঁকে ডাঃ দেবী শেঠির হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গাড়ি থেকে নেমে মান্না দে হতবাক। হাসপাতালের নার্স ও অন্যরা ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি হাসপাতালে পৌঁছতেই সবাই তাঁকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানালেন। মান্না বাবু মনে মনে ভাবছেন তিনি এসেছেন চিকিৎসা করতে অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফুলের তোড়া দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা,অভিনন্দনে ভরিয়ে তুলছেন। তিনি কিছু বুঝতে পারছেন না।
মিষ্টি হেসে ডাঃ শেঠি বললেন মান্না দে'কে বললেন আপনি আমাদের একজন অতিথি। আপনার গান শুনে আমরা বড় হয়েছি। ডাঃ শেঠির তত্ত্বাবধানে তিনি প্রায় এক সপ্তাহ সেখানে ছিলেন। প্রতিদিন নিয়ম করে ডাক্তারবাবু তাঁকে দু'বেলা দেখতে আসতেন। অনেক রকম পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে ডাঃ শেঠি, মান্না দে'কে বললেন আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ্য। একদিন সকাল বেলা মান্না দে'র শুধু ছুটি হল না, তাঁর চিকিৎসার জন্য একটি পয়সাও নিলেন না ডাঃ শেঠি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অভিভূত হয়েছিলেন মান্না দে। এই ঘটনা প্রমাণ করে ভারত বিখ্যাত হার্ট স্পেশালিস্ট ডাঃ দেবী শেঠি শুধু মাত্র একজন ধন্বন্তরী হার্টের চিকিৎসক নন একজন গুণী মানুষ কে কিভাবে সম্মান জানাতে হয় তিনি খুব ভাল ভাবে জানতেন। পদ্মশ্রী,পদ্মভূষণ ডাঃ দেবী শেঠি কে আমাদের শুভেচ্ছা।
সংকলনে ✍ অরুণাভ সেন।।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
পুস্তক ঋণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার, জীবনের জলসাঘরে মান্না দে