এসএমটিভি ডেস্ক :
কোচ যখন এলেন তখন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের বাকি মাত্র ৫-৬ মাস। ক্যাম্পে এসে এমন সব বিচিত্র কিছু দেখলেন তা আগে কখনো দেখেননি। একজন ডিফেন্ডার তার ওজন দেদারসে বাড়িয়ে চলেছে। আরেকজন ফরোয়ার্ড ফাইনালে থার্ডে গিয়ে আর দৌড়াতে পারছে না, এমনকি চেষ্টাটাও করছে না। আবার কয়েকজন তো অনুশীলন শুরু ও শেষের আগে একবার করে ভিডিও করে নিচ্ছে। এটা ঠিক যে আমাদের কাছে এসব কোনো ব্যাপার না, কিন্তু একজন ইংলিশ কোচের কাছে অবাক করার মতোই ব্যাপার।
আগেই বলে রাখি, কারো সাফাই গাইছি না। এই মেয়েরা আমাদের দেশের সম্পদ, তাদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রয়েছে। টানা দুটি সাফ জিতিয়েছে, এমনকি দেশে নারী ফুটবলের অগ্রগতি এনে দিয়েছে তারাই। কিন্তু সারা জীবন তো আর এরা দলকে টেনে নেবে না। একটা জায়গায় গিয়ে তো থামতেই হবে। বিশ্ব ফুটবলে বড় বড় তারকাদেরও থামতে হয়েছে। সাবিনা খাতুন আমার প্রিয় খেলোয়াড়, ঋতুপর্ণার খেলা এখনো চোখে লেগে আছে। মাসুরার ক্লিয়ারেন্স দুর্দান্ত কিন্তু এদের রিপ্লেস কি আসবে না? অবশ্যই আসবে। এই মেয়েদের মধ্যে অনেকেই আগের মতো সেরা ছন্দে নেই। তাই যেকোন কোচ চাইবে, নতুন কিছু ভাবতে।
আর এই নতুন কিছুর ভাবনা যদি কোচের ভুল হয় কিংবা ম্যানেজমেন্টের ভুল হয় তাহলে মেয়েদের এই বিদ্রোহ শতভাগ ঠিক আছে। আপনারা বিদ্রোহ করতেই পারেন। কোনো সমস্যা নেই। বাফুফের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। কিন্তু একজন কোচের বিরুদ্ধে? শুধু কমফোর্ট জোন নয় বলে এই কোচের অধীনে খেলবেন না?
সমস্যা আসলে ১৭-১৮ জনকে নিয়ে নয়। সমস্যা হচ্ছে হাতে গোনা সর্বোচ্চ ৩-৪ জনকে নিয়ে। যাদেরকে বাটলার বেঞ্চে বসিয়ে নতুন খেলোয়াড়দের ট্রাই করেছে। এই নতুন খেলোয়াড় ট্রাই করতে গিয়ে যখন বাটলার যখন বলেছে, দেখো তোমার ওজন বেড়েছে একটু কমাতে হবে তখনি এটা বডি শেমিং হয়ে গেল। বাহ! খাটোকে খাটো এবং লম্বাকে লম্বা বলা যাবে না এই আইন কোথায় আছে আমার আসলে জানা নেই।
আপনি ছুটির দিনে বাইরে ঘুরে বেড়াবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যাপার। কিন্তু অনুশীলনের দিনে মাঠে নামার আগে এক পসলা ভিডিও করবেন আবার মাঠ থেকে বের হওয়ার আগে আরেক পসলা ভিডিও করে সেটা সামাজিক মাধ্যমে দিবেন। এতে কি মনোযোগে ধাক্কা লাগে না? কোনো কোচ চাইবে এসব? পুরুষ জাতীয় দলের কোচ তো কোনো খেলোয়াড়ের ফেসবুকে ছবি দিলেই রেগে মেগে আগুন হয়ে যায়। আর সেখানে ব্লগ কিংবা রিলস বানানো হচ্ছে দেদারসে। এসব করলে এই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেই থাকতে হবে সেটাই বুঝিয়েছেন বাটলার। এশিয়ায় আর নিজেদের অবস্থান জোরাল করতে হবে না!
নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে আপনারা আওয়াজ তুলেছেন সেটা খুবই ভালো কথা। তবে সেটা হোক, আর্থিক কিংবা বেশি বেশি ম্যাচ খেলার এবং সুযোগ সুবিধা নিয়ে। একজন কোচের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করবেন না। অবশ্যই দলের চেয়ে বড় কিছু নেই। তবে যে দল ভবিষ্যত গড়তে বাঁধা দেয় সেই দল নিয়ে আসলে কিছু বলার নেই। একজন যাবে আরেকজন আসবে এই নিয়ম সবসময় মেনে চলতে হবে।
বসুন্ধরা কিংস এই মেয়েদের নিয়ে দল গড়েছিল। মেয়েরা বেশ আর্থিকভাবে লাভবাম হচ্ছিলেন। তিন মৌসুম পরই তাদের মাথায় ঢুকে গেল, আমরা সাফ চ্যাম্পিয়ন, আমাদের বেতন কেনো কম হবে? তপু বর্মণ, আনিসুর রহমান জিকোরা পায় কোটি টাকা, আমরা তবে বৈষ্যমের শিকার কেনো হবে? আমাদেরও ১৫-২০ লাখ দিতে হবে। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলে মেয়েদের ফুটবল যে ছেলেদের তুলনায় কতটা অগুরুত্বপূর্ণ সেটা তারা জানে? হ্যাঁ, আপনারাও ভালো অর্থ পাওয়ার দাবিদার, তাই বলে পুরুষ ফুটবলারদের সঙ্গে তুলনা করবেন? এরপর তো কিংস দলই গড়ল না। তাই এসব কাদা ছুড়াছুঁড়ি না করে শান্তিতে দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নেন। সবার জন্যই সেটা মঙ্গল হবে।
লেখক : স্পোর্টস রিপোর্টার, কালের কণ্ঠ।