লেখক: সাংবাদিক নেতা শেখ তিতুমীর আকাশ: মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য সমস্যার আরেকটি বড় উৎস হলো অনলাইনে তথ্য নিয়ন্ত্রণের রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টা। অনেক দেশেই গণমাধ্যম গুলোকে কাজ করতে হয় কঠোর ও দমনমূলক পরিবেশে। তাই এসব জায়গায় ইন্টারনেট হয়ে ওঠে মুক্ত ও স্বাধীন মতপ্রকাশের শেষ জায়গা। কিন্তু এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ওপরও দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে নানান কৌশলে। বেশ কিছু দেশে শক্ত হাতে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তবে কিছু কিছু দেশে সাংবাদিকদের দমন করিতে সরকারি তথ্র্র প্রযুক্তি বিভাগ গুলো কে কন্টোল করে, তার ভিতরে আমাদের এই বাংলাদেশ বিন্দু মাত্র পিছিয়ে নেই।
আজ স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা এখন বিশাল এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কোথাও কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা এমন আইন প্রণয়ন করছেন, যা কথা বলার অধিকার ক্ষুণ্ন করছে; কোথাও এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে যে, সাংবাদিকেরা তাঁদের কাজ চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন না। এই চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবিলা করতে হলে সাংবাদিকদের জানা দরকার, সাংবাদিকদের পথ চলতে বিশেষ বিশেষ আইন বিষয়ে জানতে হবে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জন্য কী ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।
""আসুন আমরা ধারাবাহিক ভাবে প্রতিদিন সেটা আপনাদের জন্য প্রকাশ করব সাথে থাকবেন""
যেমন মানহানির মামলার ঝুঁকি এড়াতে বা কমাতে কী করবেন-
সাংবাদিকেরা আইনি ঝুঁকি পুরোপুরি কখন এড়াতে পারেন না, তবে মানহানির জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে নিচের যে পরামর্শগুলো দিব তাহা আপনারও আপনাতের অনেক উপকারে আসতে পারে।
মনে রাখবেন মানহানি: মানহানি একটি সাধারণ আইনি পরিভাষা, যা দিয়ে বিস্তৃতভাবে বোঝানো হয়: এমন কোনো মিথ্যা বার্তা ছড়ানো, যা অন্যায্যভাবে কোনো ব্যক্তির ক্ষতি সাধন করে বা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে মানহানি বলতে বোঝানো হয়, কোনো ব্যক্তির“সুনাম ও মর্যাদার-বিরুদ্ধে- আইনবহির্ভূত আক্রমণ”।
এক একেক দেশে মানহানি-সংক্রান্ত আইন এক একেক রকম হতে পারে। তাই, মানহানি সংক্রান্ত অভিযোগ মোকাবিলার প্রথম পদক্ষেপ হলো: সংশ্লিষ্ট দেশের বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে জানা এবং স্থানীয় আইনি পরামর্শকদের সাহায্য নেওয়া।
যেমন- বাংলাদেশে তথ্য আইন ২০০৯ এর বিধিঃ আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এসব আইন বিষয়ে সাংবাদিকদের জানা খুব জরুরি
"মনে রাখবেন —শুধু সেটুকুই বলুন, যা আপনি প্রমাণ করতে পারবেন। আপনার সাংবাদিকতার কাজের ক্ষেত্রে যে ঘটনার পরিস্খিতিতে পড়েন না কেনো তাহার যত পারেন তথ্য প্রমান ও রেকর্ড রাখুন, সম্মতি নিন, তথ্য যাচাই করুন, বিশ্বস্ত সূত্র ব্যবহার করুন। "
(ক) যদি আপনি একজন ভালো সাংবাদিক হতে চান তাহলে,সাংবাদিকতার আদর্শ নীতিগুলো মেনে চলুন। নিউজের ক্ষেত্রে যা প্রকাশ করছেন, সে ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ, যথার্থ ও নির্ভুল থাকার চেষ্টা করুন। সোর্স ও উদ্ধৃতি প্রকাশে সতর্ক থাকুন। যেখানে সম্ভব, সম্মতি নিয়ে সাক্ষাৎকার বা আলাপচারিতা তথ্য প্রমান রাখুন রেকর্ড করুন। কখন কোন ভাবে কোনো বিবৃতি বা ভাষ্য দেবেন না, যা আপনার উদ্দেশ্যর বাইরে ভিন্ন পরিণতি তৈরি করবে, বা যেটি সমর্থনের মতো পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ আপনার কাছে নেই। এ ছাড়া কারও বক্তব্যের খণ্ডিত বা বাছাই করা অংশ কিংবা সারসংক্ষেপ উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখে প্রকাশ করে দেবেন না। এখানেই রইল ফোন কল ও আলাপচারিতা রেকর্ডিং এবং সাংবাদিকতার কৌশল ও নীতিমালা সম্পর্কে আরও সব থেকে কিছু উপকারী কথা যাহা আপনাদের কাজে আসবে সব সময়।
(খ) আপনি কী বলছেন, সে ব্যাপারে সব সময় সতর্ক থাকুন। শুধু সেটুকুই বলুন, যা আপনি প্রমাণ করতে পারবেন। বিভিন্ন বক্তব্যের যথার্থতা নিশ্চিত করুন এবং অস্পষ্টতা ভিক্তিহীন তথ্য পরিহার করুন।
(গ) গবেষণা ও অন্যান্য নথিপত্র ভালোভাবে সংরক্ষণ করুন। আপনি যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কেলেঙ্কারি প্রকাশ করেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেই বক্তব্যের সমর্থনে প্রমাণ হাজির করতে হবে। দেখাতে হবে যে, আপনার বক্তব্য সঠিক এবং তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বলা হয়েছে। তাই যত বেশি সম্ভব প্রমাণ সংগ্রহ করুন তথ্য সংরক্ষণ করবেন এবং সে ব্যপারে যত্নশীল হবেন।
(ঘ) নিউজের কাজে তথ্য সংরক্ষণের কাজে যদি কোনো বিষয়ের অডিও বা ভিডিও করতে হয়, তাহলে সেটির লিখিত সম্মতি নিয়ে রাখা ভালো।
(ঙ) সব সময় তথ্য যাচাই করুন এবং বিশ্বস্ত সূত্র ব্যবহার করুন। কোথাও কোনো কিছু লেখা আছে বলেই তা সত্য বলে ধরে নেবেন না।
মনে রাখুন: মানহানিকর বার্তা পুনঃপ্রকাশ করার জন্যও আপনি মামলার শিকার হতে পারেন। ফলে কোনো অভিযোগ নতুন করে তোলার সময়ও সতর্ক থাকুন। এমনকি সম্ভাব্য কোনো মানহানিকর টুইট নির্দোষভাবে রি-টুইট করার জন্যও আপনি মামলার ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন।
(চ) কোনো বিষয়ে যদি মতামত দিতে হয়, তাহলে স্পষ্টভাবে বলে দিন যে, এটি আপনার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন এবং এটি সরল বিশ্বাসে দেওয়া হয়েছে।
যদি আপনি জানেন যে আপনি যা লিখছেন তা মানহানিকর, তাহলে আগে যাচাই করে নিন, আপনার এটি সম্পর্কে রিপোর্ট করার অধিকার আছে কি না। মানহানিকর হোক বা না হোক, কিছু বিষয় নিয়ে রিপোর্টিং করার অধিকার আপনার সব সময়ই থাকে। তবে সতর্ক থাকুন।
কারণ এক একেক দেশের মানহানি আইন এক একেক রকম হতে পারে। যেমন, যুক্তরাজ্যের সহ মধ্য প্রাচ্যে কিছু রাষ্ট্রে আইনি ব্যবস্থা বিশেষভাবে সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে করা মানহানি মামলার প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে। সেটার বিচারও কঠোর হয়ে থাকে।
(জ) মানহানি মামলা গুলো বেশ সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হয়। এমনকি যদি কোনো মামলা জিতেও যান, তবু নিজেকে রক্ষার লড়াইয়ে অনেক টাকা খরচ হবে। হয়রানী তো ১০০% হতে হয়, আপনার লায়াবিলিটি কাভারেজ কেমন, তা দেখে নিন। পেশাগত ইনডেমনিটি বা লায়াবিলিটি ইনস্যুরেন্স দিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বিবেচনা করুন। সব সময় আইন জেনে যে কোন নিউজ করা টা ভালো। আইন বিষয়ে না জেনে যে কোন স্থানে নিউজ করতে গেলে, অনেক সময় হামলা ,মামলার শিকার হই, যেমন আমাদের বাংলাদেশে এইরুপ অনেক প্রমানিত।