নিজস্ব প্রতিবেদক :
বুধবার ‘আয়নাঘরের তিনটি স্পট পরিদর্শন করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “আইয়ামে জাহেলিয়াত বলে একটা কথা আছে, গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠা করে গেছে সর্বক্ষেত্রে, এটা (আয়নাঘর) তার একটা নমুনা।” এ সময় স্থানীয় ও বিদেশি গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা এবং উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য ও ভুক্তভোগীরা তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে করা গোপন এসব বন্দিশালা আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরা এলাকায় বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা সবাই সঙ্গে ছিলেন, কাজেই আমার নতুন করে কিছু বলতে হবে না। এটার বর্ণনা যদি বলতে হয়, তাহলে বলব এটা বীভৎস দৃশ্য, নৃশংস অবস্থা, অতীতে এখানে যেসব অবস্থা হয়েছে। যতটা শুনি অবিশ্বাস্য মনে হয়। এটা কি আমাদেরই জগৎ, আমাদেরই সমাজ?”
তিনি বলেন, “যারা এর (গুম) শিকার হয়েছে, তারা আমাদের সঙ্গে আছেন, তাদের মুখ থেকে শুনলাম কী হয়েছে তাদের সঙ্গে, কোনো ব্যাখ্যা নেই এর। কোনো ব্যাখ্যা থাকলে মানুষ বুঝে এর কোনো কারণ ছিল। বিনা কারণে মানুষকে রাস্তা থেকে তুলে আনা হয়েছে।”
এ রকম টর্চার সেল বাংলাদেশজুড়ে আছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমার ধারণা ছিল, আয়নাঘর বলতে কয়েকটি আছে এখানে। এখন শুনতেছি এই আয়নাঘরের বিভিন্ন ভার্সন দেশজুড়ে আছে। কেউ বলছে ৭০০, কেউ বলছে ৮০০, এটির সংখ্যাও নিরুপণ করা যায়নি।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমার জানামতে ভুক্তভোগীদের সংখ্যা ১৭০০ এর বেশি। অজানা কত তা তো আমরা জানি না। কেউ কেউ বলে যে এটা তিন হাজারেরও বেশি হতে পারে।” “এই যে মানুষ উধাও হয়ে গেল, নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, কেউ বলতে পারছে না সে কোথায়। তার (একজন ভুক্তভোগী) মেয়ে আজ আপনাদের সামনেই ছিল”- সাংবাদিকদের বলেন তিনি।
“সে বলছে আমার মাকে কোথায় নিয়ে গেছে, আজ নয় বছর হলো। নয় বছর ধরে আমরা খোঁজ পাইনি।” যোগ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “সে নিজেও এখানে (আয়নাঘরে) ছিল। মায়ের সঙ্গে ছিল। তাকে রেখে মাকে নিয়ে চলে গেছে। এই দৃশ্য করুণ দৃশ্য।”
গুমের মতো ঘটনা হতে দেওয়া আমাদের সবারই অপরাধ বলে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আজকে আমরা মুক্ত হলাম। মুক্ত বাংলাদেশে আমরা যেন আবার নতুন সমাজ গড়তে পারি।”
যেসব এভিডেন্স দেখা গেছে, সেগুলো যাতে কেউ বিনষ্ট করতে না পারে সেজন্য সিলগালা করে দেওয়া হবে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা। এটার নমুনা, সাক্ষী, ডকুমেন্টেশন, গুম কমিশনের রিপোর্টের মধ্যে থাকবে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “এটি পাঠ্য হিসেবে অবশ্যই পড়তে হবে। আর যারা করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। তা না হলে এ জাতি নিষ্কৃতি পাবে না।”