সৈয়দ আবু মকসুদ :
নগরীর মিয়াখান নগরসহ নগরীর ফুটপাতের মাঝে কিংবা রাস্তায় থাকা ড্রেনের স্ল্যাব উধাও হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এতে নিরাপদে হাঁটার পথই এখন তৈরি হয়েছে মরণ ফাঁদে। এছাড়াও চট্টগ্রাম নগরে প্রধান প্রধান সড়কগুলোর পাশেই রয়েছে ড্রেনের ওপর নির্মিত ফুটপাত। তবে নজরদারির অভাবে ফুটপাতের বেশিরভাগ অংশই অবৈধভাবে দখলে থাকছে অসাধুদের।
স্থানীয়রা বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর সব থেকে বেশি খোয়া গেছে বিভিন্ন ফুটপাতে কিংবা রাস্তায় থাকা লোহার তৈরি স্ল্যাব। যেগুলো সরিয়ে ফুটপাতের নিচের ড্রেন পরিষ্কার করে থাকেন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। তবে সব যে চুরি হচ্ছে তাও নয়, লোহা ব্যতীত ঢালাই দিয়ে তৈরি স্ল্যাবের মধ্যে অনেক জায়গাতে ভেঙেও গেছে। আর দীর্ঘ সময়েও স্লাবগুলো মেরামত, পুনঃনির্মাণ বা পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নেই দেখে হতাশ পথচারীরা। যদিও এর পাশাপাশি দখলে থাকা ফুটপাতগুলোতে হেঁটে চলাচলের অবাধ ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবিও রয়েছে তাদের।
মিয়াখান নগরের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো ব্যতীত প্রতিদিন কালামিয়া বাজার থেকে টেরিবাজার পর্যন্ত কয়েকবার যাতায়াত করতে হয়। যানজট এড়াতে প্রায়ই হেঁটে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে হয়। তবে ফুটপাতের অনেক জায়গা নির্মাণাধীন বাড়ির বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে দখল করে রাখা হয়েছে, আবার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামালও ফুটপাত দখল করে রাখা থাকে। ফলে সরু ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হয় সবাইকে। তিনি বলেন, ফুটপাত দখলের বাইরে যেটুকু জায়গা থাকে সেটাও আবার মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে ড্রেনের স্ল্যাবগুলো না থাকায়।
এদিকে দিনে দিনে নগরে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে, ফলে এখন আর সড়কের পাশ দিয়ে হাঁটার এখন আর কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে নগরের কালামিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা মহসিন বলেন, মিয়াখান নগরের প্রায় ফুটপাত দখল হয়েছে বেটারি রিক্সা মেরামতের দোকান, নির্মাণ সামগ্রী আর টং দোকানের কারণে আর এক্সেস রোডের ফুটপাত দখল হয়েছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড, পণ্য প্রদর্শনের কারণে। তবে এ এলাকায় সব থেকে বিপজ্জনক হচ্ছে কালামিয়া বাজার থেকে টেরিবাজার সংলগ্ন এলাকার ফুটপাত। যেখানে ফুটপাত ঘেঁষে হোটেল-রেস্তোরাঁর চুলাগুলো জ্বলে, যেখানে গরম তেলসহ নানা কিছু থাকে এবং মোটর রিক্সার মেরামত কাজ চলে থাকে। ফলে সেখান দিয়ে হাঁটলে যে কোনো সময় বিপদ ঘটতেই পারে। অথচ এসব দেখার জন্য যে প্রতিষ্ঠানের কাজ করার কথা তারা যেন দেখেও না দেখার ভান ধরে বসে আছে।
তবে শুধু যে ফুটপাতগুলো দখল হচ্ছে এমন নয় সড়কের পাশগুলোও দখল হচ্ছে বলে দাবি করেছেন নগরের কালিবাড়ি রোডের বাসিন্দা রায়হান। তিনি বলেন, নগরের সদরঘাট রোডের পাশের ফুটপাতে দোকানের সাইনবোর্ড, ঘড়ি মেরামতের দোকান, পান-সিগারেটের দোকানসহ ছোট ব্যবসায়ীদের দখলে থাকায় তারমধ্যে দিয়েই হাঁটতে হয় পথচারীদের। তিনি বলেন, বিপজ্জনক হলেও কালামিয়া বাজার, ময়দারমিল, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, নিউমার্কেট, চকবাজার, মুরাদপুর, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, জিইসি, বন্দরসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর পাশ দিয়ে হাঁটারও কোনো উপায় থাকে না। কারণ এসব সড়কের পাশের জায়গা আটকেই ভ্যানগাড়িতে করে বিভিন্ন ধরনের পোশাক, ফল, সবজি, খাবার সামগ্রীসহ নানান জিনিস বিক্রি করেন ক্ষুদ্র ব্যবাসায়ীরা। তাদের কিছু বলতে গেলে উল্টো লাঞ্ছনার শিকার হন পথচারীরা। তাই এখন এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সিটি করপোরেশনসহ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। ফুটপাত ও রাস্তা দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পাশাপাশি ফুটপাতের নিচে থাকা ড্রেনের স্লাবগুলোও ঠিক করতে হবে।
যদিও-এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে, সে সঙ্গে ফুটপাতের অংশে থাকা ড্রেনের স্ল্যাবগুলো সংস্কার করার পাশাপাশি নতুন করে পর্যায়ক্রমে বসানো হবে। তবে যেসব জায়গাতে লোহার স্ল্যাব রয়েছে সেগুলো প্রতিনিয়ত চুরি হয়ে যাওয়ায় এখন সে জায়গাতে বিকল্প ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।