ইসলামী ডেস্ক :
শেষ রাতে ফজরের পূর্বের পানাহারকে সাহরি বলা হয়। রোজা রাখার জন্য ফজরের পূর্বে সাহরি খাওয়া সুন্নত, কেননা এতে রোজা রাখতে সহজ হয়। এজন্যই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে দিনের বেলা রোজা রাখতে সাহায্য নাও। ’ -সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৬৯৩
সাহাবি হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমাদের ও ইহুদি-খ্রিস্টানদের রোজার মাঝে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া। ’ -সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬০৪। উক্ত সময়ে যা কিছু পানাহার করবে তাই সাহরি বলে গণ্য হবে এবং এতে সাহরি খাওয়ার সুন্নত আদায় হবে, পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়। সামান্য খেজুর ও পানি দিয়ে সাহরির সুন্নত আদায় হতে পারে। -মারাকিল ফালাহ, পৃ: ৩৭৩। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বার্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সাহরি খাও। ’ -সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৩৪৭৬। হযরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিনের উত্তম সাহরি হলো খেজুর। ’ -সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৩৪৭৫। রাসুল (সা.) এর কাছে একজন সাহাবী এলেন যখন তিনি সাহরী খাচ্ছিলেন। রাসুল (সা.) তাকে দেখে বললেন, এ খাবার বরকতের। আল্লাহ পাক বিশেষভাবে তোমাদের তা দান করেছেন। কাজেই তোমরা সাহরি খাওয়া ছেড়ে দিও না। (নাসাঈ)।
সাহরির ফজিলত
হজরত আনাস (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সাহরি খাও, কারণ সাহরিতে বরকত রয়েছে। ’ –সহিহ বোখারি, হাদিস: ১৯২৩। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সাহরি খাওয়ায় বরকত রয়েছে, তাই তোমরা তা কখনও ত্যাগ করো না। যদিও এক ঢোক পানি দিয়েই হোক। কেননা আল্লাহতায়ালা সাহরি আহারকারীদের ওপর রহম করেন এবং তার ফেরেশতাগণ তাদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকেন। ’ -মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১১০৮৭
সাহরির খাওয়ার উত্তম সময়
সাহরি খাওয়ার সুন্নত সময় হলো, দেরি করে শেষ সময়ে সাহরি খাওয়া। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা শেষ সময়ে সাহরি খেতেন। ফজরের ওয়াক্ত আসার পূর্বক্ষণে সাহরি খেলে রোজা রাখতে অধিকতর সহজ হয়, ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কষ্ট করতে হয় না। অতি সতর্কতাভেবে ফজরের অনেক আগে সাহরি শেষ করা সুন্নত নয়।
হাদিস শরিফে এসেছে, একদা হজরত আয়েশাকে (রা.) জিজ্ঞেস করা হলো, দু’জন ব্যক্তির মধ্যে একজন দেরিতে সাহরি খায় এবং তাড়াতাড়ি ইফতার করে আর অপরজন তাড়াতাড়ি সাহরি খায় এবং দেরিতে ইফতার করে- কোনটি উত্তম? হযরত আয়েশা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, দেরিতে সাহরি খায় এবং তাড়াতাড়ি ইফতার করে কোন ব্যক্তি? উত্তর দেওয়া হলো হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ। তখন হযরত আয়েশা (রা.) বললেন, হ্যাঁ, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরূপই করতেন। -সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ২১৫৮
সাহরির শেষ সময়
বিশেষজ্ঞ মুফতিগণের অধিকাংশের মতে সুবহে সাদেকের সময় তথা সাহরির সময় শেষ হয় যখন সূর্য ওই এলাকার ভুপৃষ্ঠের ১৮˚ ডিগ্রি পরিমাণ নিকটবর্তী হয়। যার আনুমানিক সময় হলো, সূর্যোদয়ের সোয়া এক ঘন্টা পূর্বে। তাই ১৮˚ ডিগ্রির পরে খেলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। -ইমদাদুল আহকাম: ১/৪০১। তবে বর্তমানে সাহরির সময় শেষ হলো কি-না তা সর্বসাধারণের জন্য নির্ভরযোগ্য ক্যালেন্ডার ও নির্ভুল ঘড়ির মাধ্যমেই জানা সহজতর। তা দেখেই সঠিক সময়ের মধ্যে পানাহার শেষ করবে। আমাদের দেশে অনেকের ধারণা মতে ফজরের আজান হয়ে গেলে আজান শেষ হওয়া পর্যন্ত খাওয়া যায়- এ ধারণা সঠিক নয়। কেননা আজান যদি ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পরে দেওয়া হয় তাহলে তো আজানের পূর্বে সাহরির সময় শেষ হয়ে যাওয়ায়- তখন আর খাওয়া যাবে না, খেলে রোজা শুদ্ধ হবে না। হ্যাঁ, যদি কোনো মসজিদে ফজরের সময় শুরু হওয়ার পূর্বে আজান দিয়ে ফেলে, সেটা ভিন্ন কথা, সেক্ষেত্রে সাহরির সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত খাওয়া যাবে।
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.