1. admin2@dailysmtv24.com : admin :
  2. admin@dailysmtv24.com : admin :
মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ১২:৪৩ অপরাহ্ন

কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন “নাখোদা মসজিদ” সাজে রমজানে

Coder Boss
  • Update Time : সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫
  • ১৪ Time View
ভারতের প্রাচীন শহর কলকাতার প্রধান এবং ঐতিহ্যবাহী ‘নাখোদা মসজিদ’ এর সামনে লেখক।

সৈয়দ আবু মকসুদ : মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহকে স্মরণ করতে ‘খোদা’ শব্দটিও ব্যবহার করা হয় থাকে। ফলে মসজিদ হলো খোদার ঘর। তাহলে প্রশ্ন হলো, কেন কলকাতার এ শতাব্দী প্রাচীন মসজিদের নাম ‘নাখোদা মসজিদ’? এর উত্তর পেতে হলে মসজিদ প্রতিষ্ঠার গল্পটি জানতে হবে।

মসজিদটি মধ্য ও উত্তর কলকাতা সংলগ্ন জাকারিয়া স্ট্রিট এবং রবীন্দ্র সরণির সংযোগস্থলে চিতপুর এলাকায় অবস্থিত। এখান থেকেই শুরু হয় কলকাতার বড় বাজার। দ্বিতল বিশিষ্ট এ মসজিদের চাতাল এতটাই বড় যে, লাখো মানুষের জমায়েত হতে পারে। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে যেমন থাকেন স্থানীয়রা, তেমন জুমাবারে নামাজ পড়তে আসেন বাংলার দূর-দূরান্ত থেকে। বলা হয়, এখানে খোদার সাচ্চা বান্দার দোয়া মোনাজাত বিফলে যায় না। ঈদের দিন প্রায় লাখো মানুষের সমাগম হয়।

মসজিদের বিশাল স্থাপত্যটি নির্মাণ করেছিলেন গুজরাটের বাসিন্দা, তৎকালীন বিখ্যাত নাবিক আবদুর রহিম ওসমানের নেতৃত্বে। মসজিদ নির্মাণের সমুদয় অর্থ তিনিই দান করেছিলেন। তাই তার পেশার দিকে ইঙ্গিত করে মসজিদের নাম রাখা হয় ‘নাখোদা মসজিদ’। কারণ, ফারসি ভাষায় নাবিকের সমার্থক শব্দ হলো ‘নাখোদা’। প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে দুটি ভাষাকে সরকারি ভাবে প্রাধান্য দেওয়া হত। একটি ফারসি অপরটি ইংরেজি। ইতিহাস বলছে, তৎকালীন সময় ভারতজুড়ে ফারসি ভাষার যথেষ্ট কদর ছিল। অর্থাৎ নাবিকের তত্ত্বাবধানে সৃষ্টির কারণে মসজিদটির নাম হয় ‘নাখোদা’ মসজিদ। ফলে এর সঙ্গে খোদা বা আল্লাহর কোনো সম্পর্ক নেই। এমনটাই মত মসজিদের ইমাম মোহম্মদ শফিক কোয়াসমি’র।

মসজিদটি শুরুতে ছোট এবং দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। পরে এটি সম্প্রসারণ করা হয়। আজকে যে অঞ্চলে ‘নাখোদা’ মসজিদ স্থাপিত হয়েছে সেখানে পাশাপাশি দুটো মসজিদ ছিল। একটি মসজিদের প্রবেশদ্বার ছিল জাকারিয়া স্ট্রিটের দিকে। অপর মসজিদের মূল ফটক ছিল রবীন্দ্র সরণির দিকে। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী মাওলানা আবুল কালাম আজাদের বাবা ছিলেন মাওলানা খায়রুদ্দিন। ওনার ইচ্ছেতেই দুটি মিলে একটি বড় মসজিদে পরিণত হয়। একটা মসজিদের মোতাওয়াল্লী ছিলেন এক নারী। নাম শামসুন্নি সাবেরী। আর অপর মসজিদ ট্রাস্টি ছিলেন রওশন হাক্কাক। পরবর্তীতে মাওলানা খায়রুদ্দিনের মধ্যস্থতায় দুই মসজিদ কমিটির সম্মতিতে সে অঞ্চলে বড় মসজিদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবং এতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন গুজরাটের বাসিন্দা নাবিক আবদুর রহিম। মসজিদ নির্মাণে তৎকালীন ১৫ লাখ রুপি ব্যয় করা হয়েছিল। বর্তমানে যার বাজার মূল্য কয়েকশো কোটি রুপির বেশি। ১৯২৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল। নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৪২ সালে। ‘নাখোদা’ মসজিদ যেমন মুসলমানদের কাছে প্রাচীন ইবাদতস্থল হিসেবে পরিচিত ঠিক ততটাই কলকাতার ঐতিহ্যশালী স্থাপত্য হিসেবেও সমাদৃত। দুই ঈদে এখানে লাখো লাখো মানুষ সমবেত হন। এছাড়া সারাবছর লেগে থাকে পর্যটকদের আনাগোনা। মসজিদের নির্মাণশৈলিতেও ঐতিহাসিক নানা নিদর্শন বিদ্যমান। প্রধান ফটক বানানো হয়েছে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের আগ্রার ফতেপুর সিক্রির বুলন্দ দরওয়াজার অনুকরণে। একই সঙ্গে মোঘল সম্রাট আকবরের সমাধিসৌধের প্রভাবও রয়েছে নাখোদা মসজিদের নির্মাণশৈলিতে। এসব ডিজাইনের জন্য রাজস্থান, গুজরাট থেকে থেকে আনা হয়েছিল গ্রানাইট, বেলে এবং শ্বেতপাথর। লাল বেলে পাথর দিয়ে বানানো ইন্দো-সেরাসেনিক রীতির সুন্দর স্থাপত্য এটি। শ্বেতপাথর দিয়ে গড়া মসজিদের অভ্যন্তরীণ অংশ। যা তাজমহলের কথা মনে করিয়ে দেবে। বিস্তৃত চাতালেজুড়ে রয়েছে গ্রানাইট পাথর।

নাখোদা মসজিদে রয়েছে,  ১০০ ফুট উচ্চতার ২৫টি ছোট মিনার, ১৫০ ফুট উচ্চতার দু’টি বড় মিনারসহ গোটা অবকাঠামো জুড়ে দেখা যায় চোখধাঁধানো অলংকরণ। মসজিদের সৌন্দর্য আর ইতিহাসের টানে সারাবছর এখানে  মুসল্লি ও পর্যটক আগমন করেন। কলকাতার সব চেয়ে বড় এবং প্রাচীন মসজিদ বলে ‘বরি মসজিদ’ (বড় মসজিদ) নামেও ডাকা হয় নাখোদা মসজিদকে। প্রতিবছর রমজানের মুহূর্ত থেকে ধীরে ধীরে সেজে ওঠে ‘নাখোদা’ মসজিদ। আজও যেন তার দেওয়ালে দেওয়ালে গাঁথা অবিভক্ত বাংলার ইতিহাস। এখানে না এলে কলকাতা দেখা যেন অসমাপ্তই থেকে যায়।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category

© All rights reserved © 2025 Coder Boss

Design & Develop BY Coder Boss