ইসলাম ডেস্ক :
সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। নিন্দাহীনতা এক প্রকারের শারীরিক অসুস্থতা, যা মানবদেহে বহু রোগব্যাধির জন্ম দেয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ঘুমকে তার অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) দ্রুত সময়ে রাতে ঘুমিয়ে যেতে বলেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। রাত্রিকে করেছি আবরণ। ’ (সুরা : নাবা, আয়াত : ৯-১০)’
মুমিনের ঘুম ইবাদতের অংশ
মুমিন যখন নিয়মানুযায়ী ঘুমায়, তখন তার ঘুম ইবাদতে পরিণত হয়। মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, আমি রাতের প্রথমাংশে শুয়ে পড়ি এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমিয়ে উঠে পড়ি। এরপর আল্লাহ আমাকে যতটুকু তাওফিক দেন তিলাওয়াত করতে থাকি। এতে আমি আমার ঘুমের অংশকেও সওয়াবের বিষয় বলে মনে করি, যেমন আমার দাঁড়িয়ে তিলাওয়াতকেও সওয়াবের বিষয় বলে মনে করি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৩৪৪)
মুমিন কখন ঘুমাবে
কোরআনে রাতকে ঘুমের সময় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে হাদিসে দিনের বেলা সামান্য সময় বিশ্রামের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় যাকে ‘কাইলুলা’ বলা হয়।
আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্য রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে (রাতে) বিশ্রাম গ্রহণ করো ও (দিনে) তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করো এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। ’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৩)
বিনা প্রয়োজনে রাত-জাগা অপছন্দনীয়: আবু বারজা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর অহেতুক আলাপচারিতায় লিপ্ত হওয়া অপছন্দ করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৮)
মুমিন যেভাবে ঘুমায়
মুমিন তার জীবনের সব ক্ষেত্রে নবীজি (সা.)-এর সুন্নাহর অনুসরণ করে। আর ঘুমের কতিপয় সুন্নত হলো—
* ঘুমের আগে অজু করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাজের অজুর মতো অজু করে নাও। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৭)
* ঘুমের আগে বিছানা ঝাড়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন তোমাদের কেউ বিছানায় শয্যা গ্রহণ করতে যায়, সে যেন তার চাদরের ভেতরের দিক দিয়ে নিজ বিছানা ঝেড়ে নেয়। কেননা তার জানা নাই যে বিছানার ওপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু পড়েছে কি না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩২০)
* ঘুমের আগে আগুন নিভিয়ে দেওয়া : মহানবী (সা.) বলেন, তোমরা যখন ঘুমাতে যাবে ঘরে আগুন জ্বেলে রাখবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ; ২০১৫)
* খাবারের পাত্র ঢেকে রাখা : নবীজি (সা.) বলেন, তোমরা রাতে বাসনগুলো ঢেকে রাখবে, মশকগুলোর মুখ আটকে রাখবে। কেননা বছরে একটি রাত এমন আছে, যে রাতে মহামারি অবতীর্ণ হয়। যেকোনো খোলা পাত্র এবং বন্ধনহীন মশকের ওপর দিয়ে তা অতিবাহিত হয়, তাতেই সে মহামারি নেমে আসে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫১৫০)
* ঘরবাড়ির দরজা বন্ধ করা : নবীজি (সা.) বলেন, তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে দরজা বন্ধ করবে। কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩০৪)
* ঘুমের আগে দোয়া বা অজিফা পাঠ করা : আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন তিনি সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে দুই হাত একত্র করে তাতে ফুঁক দিতেন। অতঃপর যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে শুরু করে তাঁর দেহের সম্মুখ ভাগের ওপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার তিনি এরূপ করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)
* পাশাপাশি ঘুমানোর আগে ও ঘুম থেকে ওঠে হাদিসে বর্ণিত নির্দিষ্ট দোয়া পড়া।
* ডান কাত হয়ে শোয়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন তুমি শোবার বিছানায় যেতে চাও তখন তুমি নামাজের অজুর মতো অজু করো; এরপর ডান পার্শ্বদেশের ওপর কাত হয়ে শুয়ে পড়ো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৮৮)
আল্লাহ সবাইকে জীবনের সর্বত্র দ্বীন মেনে চলার তাওফিক দিন, আমিন।
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.