1. admin2@dailysmtv24.com : admin :
  2. admin@dailysmtv24.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে যানজট: জাতীয় অর্থনীতি, বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আধুনিক উন্নয়নের প্রভাব

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫
  • ২২ Time View

 

লেখা: হৃদয় বড়ুয়া (কলামিস্ট, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী) (baruaridoy21@gmail.com)

বাংলাদেশে সড়কপথের অবকাঠামো প্রতিনিয়ত অপর্যাপ্ত হয়ে পড়ছে, যার কারণে শহরগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা হু-হু করে বাড়ছে। এই অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ মোকাবেলা করতে সড়কগুলোর সক্ষমতা নেই। যা শুধু শহরাঞ্চলে যানজট সৃষ্টি করছে না, বরং দেশের সার্বিক অর্থনীতি, বাণিজ্য, এবং সামাজিক অবস্থাও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। ঢাকার মতো মহানগরীতে সড়ক ব্যবস্থার বিপর্যয় এক বৃহত্তর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ সড়কে আটকা পড়ে, ব্যবসায়ী, কর্মজীবী মানুষ এবং সাধারণ নাগরিকদের সময় অপচয় হচ্ছে, যার কারণে উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে, খরচ বাড়ছে এবং কর্মক্ষমতা কমছে। অপরদিকে জাতীয় অর্থনীতিতে যানজটের কারণে বছরে প্রায় ৩-৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হচ্ছে। ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় ৫ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এতে দেশের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে যেমন বাধা সৃষ্টি হচ্ছে তেমন পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়ছে।
এছাড়া, যানজটের কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি, বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরও দেশের অবকাঠামোর উপর আস্থা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। বিদেশী কোম্পানিগুলি দ্রুত এবং সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা আশা করে, কিন্তু বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থার অস্থিরতা তাদের পণ্য পরিবহন এবং অন্যান্য কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে। এসব কারণে দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের সামগ্রিক অগ্রগতি থমকে যাচ্ছে। যা দেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চিহ্নিত সমস্যাগুলির মধ্যে সড়ক অবকাঠামোর অপ্রতুলতা, ক্রমশই বৃদ্ধি যানবাহনের সংখ্যা, লাইসেন্সবিহীন যানবাহন, ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল সহ অনিয়ন্ত্রিত রিক্সা এবং নগরে বেপরোয়া অটোরিক্সা। এছাড়া, ফুটপাত দখল, অপর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ এবং আধুনিক প্রযুক্তির অভাবও যানজটের কারণ। অপরদিকে এই যানজটে নীরব ঘাতক হয়ে দাঁড়িয়েছে শব্দদূষণ। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে ইতোমধ্যেই দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণে অন্যান্য শহরের অভিজ্ঞতা :- বিশ্বব্যাপী যানজটের সমস্যাটি বর্তমানে একটি বৈশ্বিক উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেক্সিকো সিটি, সাও পাওলো, বেইজিং, নিউ ইয়র্ক এমন বহু শহর রয়েছে যেগুলি যানজটের কারণে অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক সংকটে রয়েছে। তবে, এসব শহরের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার কিছু আছে, যেগুলি বাংলাদেশে প্রয়োগ করা সম্ভব। যেমন, মেক্সিকো সিটিতে যানজট কমানোর জন্য মেট্রোরেল এবং অন্যান্য দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, যার ফলে একদিকে যানজট কমেছে, অন্যদিকে পরিবহন খরচও কমেছে। একইভাবে, বেইজিংয়ের মতো শহরগুলিতে ট্রাফিক মনিটরিং সিস্টেম এবং সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটানো হয়েছে, যা যানজট হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। এই শহরগুলোর সাফল্যের মূল সূত্র হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি এবং পরিকল্পিত নগর উন্নয়ন। বাংলাদেশে যদি এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়, বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম শহরে। তাহলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং নাগরিকদের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব।
বায়ুদূষণ: একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা :- বাংলাদেশের যানজটের আরেকটি ভয়াবহ প্রভাব হচ্ছে বায়ুদূষণ। বর্তমান বায়ুদূষণে বিশ্বের দ্বিতীয় বাংলাদেশ, ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, বায়ু দূষণ পৃথিবীর অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানবাহনের কারণে শহরের বায়ুমণ্ডলে থাকা দূষিত উপাদানগুলির পরিমাণ বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে বছরে ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মৃত্যুবরণ করছে। আর এই দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে এর প্রভাব সীমান্ত ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে, যা আন্তর্জাতিক মহলে আরও বৃহত্তর উদ্বেগ সৃষ্টি করবে।
যানজট সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন :- এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের এই সংকট থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যাবে? একদিকে, সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন রয়েছে। দেশে নতুন মেট্রোরেল, লাইট রেল এবং উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হলে যানজট কমানোর দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সহায়তা নিয়ে একটি স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া, টঘউচ (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি) এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলি দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য সহায়তা দিতে পারে। এর পাশাপাশি, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে, সড়ক নিরাপত্তা, আইন প্রয়োগ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ জরুরি।
পরিকল্পিত উন্নয়ন: একটি কার্যকরী রোডম্যাপ :- ১. গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন: মেট্রোরেল, লাইট রেল এবং বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (BRT) ব্যবস্থা সম্প্রসারণের মাধ্যমে গণপরিবহন ব্যবস্থা আরও কার্যকর এবং জনবান্ধব করা। ২. ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ: স্মার্ট ট্রাফিক সিগন্যাল, মনিটরিং সিস্টেম এবং ডিজিটাল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ব্যবহার বৃদ্ধি করা। ৩. বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ: বৈদ্যুতিন গাড়ি এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূষণ হ্রাসের পদক্ষেপ নেওয়া। ৪. আইন প্রয়োগ শক্তিশালীকরণ: সড়ক নিরাপত্তা, দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা এবং কঠোর আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা। ৫. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
এই সমস্যা সমাধানে সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। যানজটের উপর বিস্তারিত গবেষণা, উন্নত প্রযুক্তি এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব। বিশ্বের অন্যান্য শহরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ তার যানজট সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে পারে এবং এর ফলে একদিকে যেমন দেশের অর্থনৈতিক গতি ত্বরান্বিত হবে, তেমনি পরিবেশগত দিক থেকেও বড় ধরনের উন্নতি সম্ভব হবে। তামধ্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের যানজট সমস্যা নিরসনে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি পুলিশের সহায়তায় এবং দেশের প্রকৌশল বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কার্যকর সমাধান খুঁজতে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর এই চিন্তা-চেতনা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের উপকারে নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে কাজ করার প্রতিফলন এবং একটি স্থায়ী সমাধানও নিশ্চিত হতে পারে যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category

© All rights reserved © 2025 Coder Boss

Design & Develop BY Coder Boss