1. admin2@dailysmtv24.com : admin :
  2. admin@dailysmtv24.com : admin :
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন

ফিলিস্তিন; বিশ্ব মানবতার গোরস্থান

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৩১ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

গাজায় প্রতি ৪৫ মিনিটে একটি শিশুকে হত্যা করছে ইসরায়েল। গত ৫৩৫ দিনের হিসাবে গড়ে প্রতিদিন প্রাণ গেছে ৩০টি শিশুর। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েল অন্তৎ ১৭ হাজার ৪০০ শিশুকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৬০০টি শিশুর পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। আরো অনেক শিশু ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে, তাদের অধিকাংশকেই মৃত হিসেবে ধরা হচ্ছে। বেঁচে থাকা অনেক শিশু যুদ্ধের তীব্র যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের সবারই জীবন অতিবাহিত হয়েছে ইসরায়েলি অবরোধের কঠোর ছায়ার নিচে, যা জন্ম থেকেই তাদের বিকাশের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করেছে। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই শিশু।
গত ১৭ মাসে ইসরায়েলের আগ্রাসন তাদের বাড়িঘর কেড়ে নিয়েছে। তাদের স্কুলগুলো ধ্বংস করেছে এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলোকে শেষ করে দিয়েছে।

গাজার শিশুদের বর্তমান অবস্থা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের প্রতিচ্ছবি। যদি ১০০ জন শিশুর কথা চিন্তা করা যায়, তাহলে তার মধ্যে দুইজন নিহত, দুইজন নিখোঁজ—যাদের মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে, তিনজন গুরুতর আহত, পাঁচজন এতিম বা তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং পাঁচজন মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। বাকিরা সবাই যুদ্ধ, বোমা হামলা ও অবরোধের ভেতর দিয়ে বড় হয়ে ওঠায় গভীর মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত। গাজার প্রতিটি শিশু যেন একেকটি জীবন্ত গল্প, যাদের শৈশব থেমে গেছে ধ্বংসস্তূপের নিচে। অথচ তারা সবাই গাজারই সন্তান। নিষ্পাপ শৈশব আর আনন্দে ভরা জীবনের অধিকার ছিল তাদের। কিন্তু সেই জীবন থেমে গেছে ইসরায়েলের বোমার আগুন আর ধ্বংসস্তূপের নিচে।

নথিভুক্ত নিহত শিশুদের মধ্যে অন্তত ৮২৫টি শিশু নিজের প্রথম জন্মদিন পর্যন্তও যেতে পারেনি। এক বছর বয়সী শিশু ছিল ৮৯৫ জন। তারা হাঁটতেই শেখেনি, তার আগেই প্রাণ হারিয়েছে। দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী নিহত শিশুর সংখ্যা তিন হাজার ২৬৬। খেলাধুলা, শেখা আর বড় হওয়ার ছোট ছোট বিস্ময় তাদের কাছে অধরাই রয়ে গিয়েছিল। গাজায় ছয় থেকে ১০ বছর বয়সী অন্তত চার হাজার ৩২ শিশুর প্রাণ গেছে। তারা রেখে গেছে স্কুলের ফাঁকা বেঞ্চ, অর্ধপরিহিত স্কুল ইউনিফর্ম আর অসমাপ্ত খাতা। নিহতদের মধ্যে ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সী তিন হাজার ৬৪৬ শিশু আগের তিনটি যুদ্ধ (২০১২, ২০১৪ ও ২০২১) পার করে চতুর্থটি আর পেরোতে পারেনি। আর ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী দুই হাজার ৯৪৯ জন কিশোর-কিশোরী আর পরিণত বয়সে পা রাখতে পারেনি। অথচ তারা ভবিষ্যতের নানা স্বপ্নে বিভোর ছিল। সেই স্বপ্ন আর ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাদের। ১৭ বছর বয়সীরা চারটি যুদ্ধে (২০০৮-০৯, ২০১২, ২০১৪ ও ২০২১) টিকেছিল, কিন্তু পঞ্চম যুদ্ধে তারা বাঁচতে পারেনি। নিহতদের শিশুদের মধ্যে আট হাজার ৮৯৯ জন ছেলে আর ছয় হাজার ৭১৪ জন মেয়ে।

গত ১৮ মার্চ ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় একযোগে ১০০টি বিমান হামলা চালায়, যার মাধ্যমে হামাসের সঙ্গে চলমান দুই মাসের যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটে। পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টায় নিহত হন ৪৩৬ জন, যাদের মধ্যে অন্তত ১৮৩ জন শিশু, ৯৪ জন নারী, ৩৪ জন বয়স্ক এবং ১২৫ জন পুরুষ। নিহত শিশুদের একজন মোহাম্মদ আবু হিলাল, তার বয়স ছিল এক বছর। সঙ্গে তার অন্তঃসত্ত্বা মা আফনানও মারা যান। আল-মাওয়াসি শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের প্রাণ যায়। অথচ এই শিবিরকে ইসরায়েল আগেই “নিরাপদ এলাকা” বলে ঘোষণা করেছিল। বাবা আলা হিলাল স্ত্রী-সন্তানকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন এই বিশ্বাসে যে ওখানেই তারা সবচেয়ে নিরাপদ থাকবে।

নিজের মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে ভেঙে পড়া আলা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ওহ, আমার সোনামনি, তুই স্বর্গে চলে যা, ওখানে তোর সব খেলনা তোর অপেক্ষায় রয়েছে। ’ মোহাম্মদ সেই ৮৯৫ শিশুর একজন যাদের বয়স ছিল এক বছর। গাজায় নিহত অন্তত ৯৩৫ শিশুর নাম মোহাম্মদ।

২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে চালানো এক ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয় তিন বছর বয়সী রিম। সঙ্গে তার পাঁচ বছর বয়সী ভাই তারেকও ছিল। রিমের মৃত্যুর পর তার দাদা খালেদ নাভহানের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি নিথর রিমকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। এই দৃশ্য গাজার জনগণের সীমাহীন যন্ত্রণা আর শোকের প্রতীক হয়ে ওঠে। খালেদ ছিলেন তার নাতনির খুব প্রিয় মানুষ। কীভাবে নাতনি রিম প্রতিদিন তাকে জড়িয়ে ধরে সম্ভাষণ জানাত, সেই কথা স্মরণ করে বেদনায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি। ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর সেই খালেদও ইসরায়েলি এক হামলায় প্রাণ হারান। যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য, সেই মানুষটিও শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধ থেকে রেহাই পাননি।

পাঁচ বছর বয়সী হিন্দ রাজাব ছিল এক প্রাণবন্ত, কৌতূহলী আর বিনয়ী শিশু— তার পরিবার ও প্রতিবেশীরা এমনটাই বলেন। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি হিন্দ এক রক্তমাখা গাড়িতে নিজেকে খুঁজে পায়—যেখানে তার পরিবারের সদস্যরা সবাই নিথর দেহ নিয়ে পড়েছিলেন। শুধু হিন্দই বেঁচে ছিল। তার পরিবার গাজার তাল আল-হাওয়া এলাকায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু পথে ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়। আহত হয়ে আর আতঙ্কে জর্জরিত অবস্থায় হিন্দ ফোন করে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে (পিআরসিএস)। সে ফোনে কাঁদতে কাঁদতে বারবার বলেছিল, ‘আমি খুব ভয় পাচ্ছি, দয়া করে আসুন। দয়া করে কাউকে পাঠান আমাকে নিয়ে যেতে। তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই হৃদয়বিদারক কথোপকথন বিশ্বজুড়ে শুনেছিল মানুষ, কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী সাহায্যকারীদের পৌঁছাতে দেয়নি। ১২ দিন পর পাওয়া যায় ছোট্ট হিন্দের নিথর দেহ— যে শিশুটি জীবনের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়েছিল। হিন্দ রাজাব ফাউন্ডেশন এখনো তার স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে যাচ্ছে এবং গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দসহ অন্যান্যদের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর গাজার সবচেয়ে পুরনো গির্জা সেন্ট পোরফিরিয়াসে ইসরায়েল এক বিমান হামলা চালায়। এতে অন্তত ১৮ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিল সোহাইল রামেজ আল-সৌরি (১৪), জুলি রামেজ আল-সৌরি (১২) ও মজদ রামেজ আল-সৌরি (১০)—তিন ভাই-বোন। তারা গির্জার ভেতরে আশ্রয় নিতে গিয়ে প্রাণ হারায়। তাদের বাবা কাঁদতে কাঁদতে স্মরণ করেন সেই ভয়াবহ মুহূর্তের কথা। ‘আমরা ভেবেছিলাম, এখানে আমরা নিরাপদ আশ্রয় পাব’, বলছিলেন তিনি। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমাদের শেষ আশ্রয় আল্লাহর ঘরে। ‘তারা আমাদের সন্তানদের, আত্মীয়দের, মামা-ফুফুর সন্তানদের ওপর সতর্কবার্তা ছাড়াই বোমাবর্ষণ করেছে। তারা আমাদের সন্তানদের মেরে ফেলেছে,’ আরও বলেন তিনি। মাহমুদের ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে সাংবাদিক হবে। তার বাবাও ছিলেন সাংবাদিক। নিজের জন্মভূমির গল্পগুলো বিশ্বের কাছে পৌঁছাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ১৫ বছর বয়সী কিশোর তার বোন খলুদের সঙ্গে মিলে ইসরায়েলের সহিংসতার চিত্র ক্যামেরায় ধারণ করছিল। তারা আবেদন জানিয়ে বলেছিল, ‘গাজায় কোনো জায়গা নিরাপদ নয়… এটি গাজায় আমাদের জীবনে সবচেয়ে তীব্র এবং সহিংস যুদ্ধ। আমাদের বাঁচতে সাহায্য করুন।

২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর রাতের হামলায় মাহমুদ নিহত হয়। সঙ্গে তার মা, সাত বছর বয়সী বোন শাম, এক বছরের ছোট ভাই আদমসহ আরও ২১ জন নিহত হন। নিরাপত্তার জন্য তারা গাজার নুসাইরাত শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। মোহাম্মদ, রিম, হিন্দ, আল-সৌরি ভাইবোন ও মাহমুদ— তাদের গল্প গাজায় চুরি যাওয়া অসংখ্য শৈশবের কাহিনি বর্ণনা করে। এই শিশুদের নিষ্পাপ স্মৃতিগুলো থেকে যাবে, কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎ কখনো পূর্ণতা পাবে না।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category

© All rights reserved © 2025 Coder Boss

Design & Develop BY Coder Boss