ডেগের ভিতরে ডাইলে চাইলে
উতরাইলে গো সই
সেই উতরানি মোরে উতরাইল
শ্যাম পীরিতি আমার অন্তরে..
টেলিসামাদ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অত্যন্ত শক্তিশালী ও জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা। তিনি একাধারে অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, সংগীত পরিচালক, প্রযোজক ও পরিচালক।
টেলি সামাদের জন্ম ১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারী, মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও এলাকায়। যেহেতু পারিবারিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তিনি শৈশবকাল থেকেই গড়ে উঠেছেন তাই অভিনয় ও সংগীত ছোটবেলা থেকেই তাকে আগ্রহী করে তুলেছে।
মুন্সিগঞ্জ শহরেই টেলি সামাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বেড়ে উঠা। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেই মঞ্চ নাটক ও সংগীত অনুষ্ঠানে তিনি অংশ গ্রহণ করে যথেষ্ট পরিচিতি পেয়েছিলেন।
‘১৯৭৩ সালে ‘কার বউ’ দিয়ে ঢালিউড চলচ্চিত্রে টেলি সামাদের আগমন হয়। ছোট্ট একটি রোল হলেও তাতেই তিনি দর্শকদের নজর কাড়তে সক্ষম হন।
টেলিসামাদ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা তার বড়ভাই বিখ্যাত চারুশিল্পী আব্দুল হাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পড়াশোনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়।
সংগীতেও রয়েছে এই গুণী অভিনেতার পারদর্শিতা। ‘মনা পাগলা’ ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি। যদিও ১৯৭৩ সালে ‘কার বউ’ দিয়ে তার চলচ্চিত্রে পা রাখা। তিনি দর্শকের কাছে সবচে বেশী পরিচিতি পান আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ ছবির মাধ্যমে।
চার দশকে প্রায় ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।টেলিসামাদ এক সময় বাংলা চলচ্চিত্রে রবিউল, খান জয়নুল, আশীষ কুমার লৌহ, আনিস, লালু, হাসমতের মতো গুণী কৌতুক অভিনেতাদের সাথে অভিনয় করেছেন।
টেলি সামাদ নজরুল ইসলামের পরিচালনায় ১৯৭৩ সালের দিকে ‘কার বৌ’ চলচ্চিত্রের ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে এই অঙ্গনে পা রাখেন।
তবে তিনি দর্শকদের কাছে যে ছবিটির মাধ্যমে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন সেটি হলো ‘পায়ে চলার পথ’। এরপর অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের বাইরে বেশকিছু চলচ্চিত্রে তিনি গানও গেয়েছেন।
আবদুস সামাদ থেকে টেলি সামাদ হওয়ার পেছনে যার অবদান তিনি বিটিভির ক্যামেরাম্যান মোস্তফা মামুন। তিনিই আবদুস সামাদ এর আবদুস বাদ দিয়ে টেলিসামাদ নামটা বসিয়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকেই তাকে সবাই টেলিসামাদ নামেই চেনে।
৭০ দশক থেকেই তাকে পর্দায় দেখেছেন দর্শকরা। এ যাবৎ অসংখ্য চলচ্চিত্র-নাটকে নানা ধরনের চরিত্রে তার দুর্দান্ত অভিনয় দর্শকের মনে দাগ কেটে আছে দারুণভাবে।
টেলি সামাদের কৌতুক অভিনয়ের ধরণ ছিল সম্পুর্ণ ব্যতিক্রম। নিজের অভিনয় শৈলি দিয়ে দর্শকদের বিনোদন ও হাসিতে সারাক্ষন মাতিয়ে রাখতেন টেলিসামাদ। একসময় কমেডিয়ান বললেই চলে আসত তাঁর নাম।
টেলি সামাদ সমানতালে অভিনয় করেছেন সিনেমায়, টেলিভিশনে। পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা। সবাইকে হাসিয়েছেন যিনি, জীবন সায়াহ্নে এসে অভাব- জরা- ক্লান্তি আর একাকীত্ব মিলিয়ে দারুন অবসাদগ্রস্থ ছিলেন একৌতুক সম্রাট।
২০১৫ সালে তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি মুক্তি পায় ‘জিরো ডিগ্রী’।
৬ই এপ্রিল আমাদের অত্যন্ত জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলিসামাদ ইহকাল ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান।
আজ এই দুইবাংলার বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদের প্রয়াণ দিবস । আজকের দিনে উনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা শুভ কামনা। আল্লাহ উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন।
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.