ছোট-বড় সব মানুষের প্রতি ভালোবাসা সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তিনি বই ও জ্ঞানের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পেতেন এবং তা অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। তিনি ছিলেন সাহসী আত্মমর্যাদা সম্পন্ন, যিনি অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নোয়াননি।
শনিবার (১২ এপ্রিল) রাউজানের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা নিকেতন গশ্চি শিশুবাগ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ মাস্টারের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাউজান গশ্চি শিশুবাগ স্কুল অ্যান্ড কলেজের আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। কর্মসূচিতে ছিল- খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল, কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভা।
বক্তারা বলেন, সিদ্দিক আহমেদ চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সাংবাদিকসহ প্রগতিশীল মানুষের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিলেন। তিনি শুধু লেখক নন একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে আজীবন তার সততা ও নিষ্ঠা ধরে রেখেছেন। প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় তার চেতনা শাণিত ছিল যা তাকে প্রকৃত মানুষ হতে সহায়তা করেছে। সিদ্দিক আহমেদ শুধু একজন মেধাবী সাংবাদিক ছিলেন না, তিনি সাহিত্য সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় পাণ্ডিত্য দেখিয়েছেন। সিদ্দিক আহমেদ ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই একজন পরিপূর্ণ মানুষ। নিজ কর্মগুণে তিনি সব বয়সী মানুষের এত প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন যে তাকে চাইলেও কখনো ভোলা যাবে না।
গশ্চি শিশুবাগ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন গশ্চি শিশুবাগ স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি শামীম আল আজাদ। অতিথি ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজম, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান ও জাহাঙ্গীর সিরাজ তালুকদার। উপস্থিত ছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক রতন কান্তি শীল ও সহকারী শিক্ষক মওলানা আলী আজম, জাবেদ হোসেন, বিপ্লব নন্দী, মিঠুন কর, রানা সোহেল, রক্সি মহাজন, কাজী মোহাম্মদ শিহাবুদ্দীন, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, নারায়ণ দাশ, শাহাদাত হোসেন, সুজয় বড়ুয়া, নাহিদ সুলতানা, নাজমা আকতার, পিয়া বড়ুয়া, তাসনোভা আকতার, আসমা আক্তার প্রমুখ।
সিদ্দিক আহমেদ এর জন্ম ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জুলাই রাউজান থানাধীন গশ্চি গ্রামে। গশ্চি প্রাইমারি স্কুলেই তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু। মেট্রিকুলেশন করেন ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে। ছাত্রাবস্থায় বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনে যোগ দেন। ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে চলে যান গ্রামে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার খিলগাঁও স্কুলে ক্লার্ক কাম টিচার পদে যোগদান করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি একতা পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পঁচিশ বছর নিজেকে নিয়োজিত রাখেন সাংবাদিকতা পেশায়। অবসর গ্রহণ করেন সহকারী সম্পাদক হিসেবে। রচনা করেছেন নয়টি গ্রন্থ। পেয়েছেন অনেক সম্মাননা, পুরস্কার। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সভায় বক্তারা আরো বলেন, সিদ্দিক আহমেদ শুধু একজন সাংবাদিক নন লেখক ও আদর্শ মানুষ হিসেবে আজীবন সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেছেন। আজীবন সৎ এ সাংবাদিক তার লেখা ও কর্মের মাধ্যমে আমাদের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকবেন। চট্টগ্রামে থাকার কারণেই সিদ্দিক আহমেদের মতো মানুষের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি।
তার আদর্শ ও জীবনাচরণের মধ্য দিয়েই তিনি চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সাংবাদিক সমাজ ও প্রগতিশীল মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন।