গাজীপুরে দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যা : গাজীপুরের টঙ্গীতে চাঞ্চল্যকর দুই সহোদর শিশুকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে বাবার দায়েরকৃত মামলায় মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মায়ের বাঁ হাতের আঙুল কাটা থাকায় সন্দেহজনকভাবে মা গ্রেপ্তার হলেও পুলিশ বলছে, ঘটনার ক্লু উদঘাটন হয়নি। শনিবার (১৯ এপ্রিল) টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ এসব তথ্য জানায়। মামলার বাদী নিহত শিশুদের বাবা আব্দুল বাতেন (৪৭)। মামলায় গ্রেপ্তার নিহত শিশুদের মা আলেয়া বেগম (৩০)।
নিহত শিশু আব্দুল্লাহ (৩) ও মালিহা (৬) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার তাতুয়াকান্দি গ্রামের আব্দুল বাতেনের সন্তান। তারা সপরিবারে পূর্ব আরিচপুর এলাকার জনৈক সানোয়ারের ৮ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিলেন। শুক্রবার বিকেলে শিশুরা নৃশংসভাবে খুন হয়।
পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল পৌনে ৩টা থেকে পৌনে ৫টার মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীরা ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে শিশু দুটিকে হত্যা করে চলে যায়। এই ঘটনায় বাবার দায়েরকৃত হত্যা মামলায় মা ও অজ্ঞাতপরিচয় আসামি উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা হয়। এই মামলায় নিহত শিশুদের মাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে এই ঘটনা কে বা কারা কেন ঘটিয়েছে, তা জানা যায়নি।
তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘মামলার বাদী তার স্ত্রী আলেয়া বেগম (৩০), বড় মেয়ে বর্ষা আক্তার ফাতেমা (৯), ছোট মেয়ে মালিহা আক্তার (৬) ও এক ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরদের (৩) নিয়ে টঙ্গীতে ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছেন। গত ১৮ এপ্রিল শুক্রবার দুপুর আনুমানিক ২টা ৪০ মিনিটে বাদী গাড়ির কাজের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে টঙ্গী পূর্ব থানাধীন সাহারা মার্কেট এলাকায় চলে যান। বাদী বাইরে যাওয়ার পরপরই তার বড় মেয়ে বর্ষা আক্তার ফাতেমা (৯) বাসা থেকে বের হয়ে বড় চাচার বাসায় যায়। তখন বাদীর স্ত্রী আলেয়া বেগম ও ছোট মেয়ে মালিহা আক্তার ও ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বাসায় ছিল। এরপর অজ্ঞাতপরিচয় আসামি/আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে সকলের অগোচরে ফ্ল্যাটের রুমে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাদীর ছোট মেয়ে মালিহা আক্তার (৬) ও ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরের (৩) গলা কাটাসহ শরীরের একাধিক স্থানে গুরুতর আঘাত করে হত্যা করে।
তদন্ত কর্মকর্তারা আরো জানান, ওই ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহসহ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণ, উপস্থিত স্থানীয় লোকজনের তথ্যের ভিত্তিতে বাদীর স্ত্রী আলেয়া বেগমকে (৩০) সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বাদীর স্ত্রী আলেয়া বেগম (৩০) এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন। তবে হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে আরো গভীর তদন্তের প্রয়োজন। এ ছাড়া আরো বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই অব্যাহত রয়েছে।
নিহত শিশুদের বাবা ও মামলার বাদী আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার স্ত্রীর একটু সমস্যা ছিল। তার চিকিৎসাও চলছিল। আমার স্ত্রী খারাপ না। কারা আমার দুই সন্তানকে হত্যা করল, আমি তাদের বিচার চাই।’
শিশুদের নানা আরফান মিয়া ও নানি শিল্পী বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাদের মেয়ের জামাই আব্দুল বাতেন দুই বছর পূর্বে বিদেশ থেকে দেশে আসে। তার আগ থেকেই মেয়ের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। পরে তার স্বামী বিদেশ থেকে এসে চিকিৎসা করালে ভালো হয়ে যায়। আলেয়ার সমস্যা দেখা দিলে সে কখনো ভাঙচুর কিংবা উগ্র আচরণ করত না। তবে স্বামীর ঘরে থাকলে বাবার বাড়ি চলে আসত আর বাবার বাড়ি থাকলে স্বামীর বাড়ি চলে যেত।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ জিএমপির অপরাধ দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিন বলেন, শিশুটির মায়ের বাঁ হাতের আঙুল কাটা। সন্দেহজনকভাবে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে কে বা কারা কী কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা জানতে আরো সময় লাগবে।
সন্তানকে বিক্রি করে মায়ের স্বপ্নপূরণ : নিজের শখ পূরণ করতে গিয়েই সন্তানের জীবনের সঙ্গে যেন নির্মম প্রহসন করলেন এক মা। ফুটফুটে শিশুটির বয়স মাত্র চার মাস। অথচ এই বয়সেই তাকে বলি হতে হলো মায়ের শখের কাছে। মোবাইল, পায়ের নুপুর, নাকফুল, নতুন কাপড়-চোপড়, বোরখাসহ পছন্দের জিনিস কিনতেই মাত্র ৪৫ হাজার টাকায় সন্তানকে বিক্রি করে দেন তার গর্ভধারিণী মা লাভনী আক্তার।
চার মাস বয়সী সন্তানের ব্যবহৃত জামা হাতে নিয়ে অঝোরে কাঁদছেন বাবা রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, “যে কোনো মূল্যে আমার সন্তানকে ফিরে চাই। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের কঠোর বিচার চাই।”
ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পন্ডুরা শেওড়াতলা গ্রামে। অভিযুক্ত মা লাভনী আক্তার চলতি মাসের ১২ তারিখে তার শিশুপুত্রকে বিক্রি করে দেন একই জেলার ভুয়াপুর উপজেলার অলুয়া গ্রামের নিঃসন্তান হোসেন আলীর কাছে। সন্তান বিক্রির টাকা দিয়ে লাভনী আক্তার কেনেন মোবাইল ফোন, পায়ের নুপুরসহ নিজের শখের নানা সামগ্রী। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনায় হতবাক এলাকাবাসী। তারা বলেন, “এই নারী মায়ের নাম কলঙ্কিত করেছেন। তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।”
ঘটনার এক সপ্তাহ পর পুলিশ শিশুসহ অভিযুক্ত মাকে আটক করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে শিশুটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে এবং তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আইনি প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, “এই ঘটনার তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অভিযুক্ত মা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।” “মা” হয়ে সন্তানের মতো অবুঝ প্রাণকে বিক্রির মতো ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে সমাজের প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে।
সচেতন মহলের মতে, “পরকীয়া, ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাব এবং মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় এমন ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
খাল থেকে উদ্ধার সন্তান, থামছেনা মায়ের আহাজারি : ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ চকবাজারের খালে পড়ে মায়ের কোল থেকে ছিটকে নিখোঁজ শিশুটির মরদেহ ১৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে চাক্তাই খালের চামড়ার গুদাম এলাকায় আবর্জনার মধ্যে ভেসে থাকা শিশুটির মরদেহ পাওয়া যায়। শিশুটির নাম সেহরিশ। তার মায়ের নাম সালমা বেগম। বাবার নাম মো. শহিদ। তারা নগরের আছদগঞ্জ এলাকায় থাকেন।
চকবাজারের কাপাসগোলা এলাকায় মো. শহিদের বোনের বাসা। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সেখানেই বেড়াতে এসেছিলেন সালমা বেগম, শিশু সেহরিশ ও তার দাদি। ব্যাটারিচালিত রিকশায় বাসায় ফেরার পথে নালায় পড়ে মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে শিশুটি। এ সময় রিকশাচালক পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন মা ও দাদিকে উদ্ধার করেন। পরে রাত সাড়ে আটটা থেকে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসে। যোগ দেন চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্ক্যাভেটর দিয়ে উদ্ধার করা হয় খালে পড়া রিকশাটি৷ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর ডুবুরিরা। রাতে ঘটনাস্থলে আসেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি যে উদ্ধার করতে পারবেন তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেন।
উদ্ধারকারী যুবক মিজান সাংবাদিকদের জানান, খালের পাড়ে আমার মেয়ের জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ নিচে তাকাই, আবর্জনার মধ্যে প্রথমে মনে হয়েছিল পুতুল পড়ে রয়েছে। মন মানছিল না। পরে কাছে গিয়ে দেখি শিশুর মরদেহ। আধঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলাম। শরীরে কাঁপন ছুটে যায়৷ ভয়ে উঠে আসি। আরও মানুষকে জড়ো করি। শিশুটির হাত একটা উপরের দিকে ছিল। উদ্ধারের পর কাদামাখা শিশুটিকে খালপাড়ে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুকের শিশু সন্তানকে হারিয়ে মৃত সেহেরিশের মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। মাকে সান্তনা দিতে গিয়ে এলাকার মানুষজনও অশ্রুসিক্ত হচ্ছেন। পুরো এলাকায় শোকাতুর পরিবেশ বিরাজ করছে সন্তানহারা মায়ের আহাজারিতে।
নালায় শিশু নিখোঁজ হওয়ার মর্মান্তিক এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জড়ো হন আশপাশের মানুষ। তারা নালায় আবর্জনার স্তূপের কারণে উদ্ধার অভিযানে বিঘ্ন হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চসিক, সিডিএর সমালোচনা করেন। তারা ব্যাটারি রিকশা বন্ধ ও জলাবদ্ধতা নিরসন প্নকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করে খালপাড়ে বেষ্টনী বা রেলিং দেওয়ার দাবি জানান। কেউ কেউ প্রার্থনা করেন নিষ্পাপ শিশুটির জন্য।
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.