১৯১২ সালের সেই ভয়াল রাতে বাবার সঙ্গে টাইটানিকে যাত্রী ছিলেন। বরফশীতল সাগরে ঝাঁপ দিয়ে জীবন বাঁচালেও হারিয়েছিলেন বাবাকে। শুধু তাই নয়, তীব্র ঠান্ডায় তার পা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে ডাক্তাররা সেগুলো কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে তিনি বলে ওঠেন, “আমি আপনাকে অনুমতি দিচ্ছি না। এই পাগুলো আমার দরকার।” মাত্র ১২ সপ্তাহের অক্লান্ত পরিশ্রমে তিনি কোর্টে ফিরে আসেন। শুধু ফিরে আসা নয়, নিজের দক্ষতাকে নিয়ে পৌঁছে যান নতুন উচ্চতায়। ডেভিস কাপে পাঁচবার জয়, ইউএস ওপেন ও উইম্বলডনের মতো মুকুট তার মাথায় উঠেছিল। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াকালীনও তার কৃতিত্ব অব্যাহত ছিল। তিনি রিচার্ড নরিস উইলিয়ামস, টেনিসের ইতিহাসে এক অনন্য নাম, যিনি প্রমাণ করে গেছেন যে দৃঢ়তা আর স্বপ্নের শক্তির কাছে কোনো বিপর্যয়ই টিকে থাকতে পারে না।
১৮৯১ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জন্ম নেওয়া রিচার্ডের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল এক অনন্য যাত্রা। মাত্র ১২ বছর বয়সে প্রথম চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন বাবার অনুপ্রেরণায়। রিচার্ড এমন একজন মানুষ, যার জীবন যেন আশ্চর্য সব অধ্যায়ে ভরা—টাইটানিকের মৃত্যু-যাত্রা থেকে অলিম্পিকের বিজয়মঞ্চ পর্যন্ত।
জীবনের পথ তখন সাফল্যের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মাঝপথে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনা—টাইটানিকের ডুব। কিন্তু রিচার্ডের গল্প এখানেই শেষ নয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডাকে সাড়া দিয়ে মিত্রবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। যুদ্ধক্ষেত্রের সাহসিকতার জন্য সম্মানিত হন ফ্রান্সের লেজিওন অব অনার খেতাবে। ১৯২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে তিনি মিশ্র দ্বৈত ইভেন্টে হ্যাজেল ওয়াইটম্যানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অর্জন করেন কাঙ্ক্ষিত অলিম্পিক স্বর্ণপদক। সেখান থেকে আরও এগিয়ে ৪৪ বছর বয়স পর্যন্ত টেনিস কোর্ট মাতিয়ে যান।
১৯৬৮ সালের ২ জুন, জীবনের পথচলা থেমে গেলেও, রিচার্ড নরিস উইলিয়ামস আজও ইতিহাসের পাতায় জীবন্ত। আন্তর্জাতিক টেনিস হল অব ফেমে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা—প্রেরণার এক উজ্জ্বল মশাল হয়ে।
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.