পাল্টাপাল্টি আক্রমণের পাঁচ দিনের মাথায় ভারত ও পাকিস্তান ‘অবিলম্বে পূর্ণ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত’ হয়েছে। নিজের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ মিডিয়ায় পাকিস্তান ও ভারত ‘তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে’ রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার (১০ মে) আল জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তান ‘পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছে।
অস্ত্রবিরতি শুরু করতে সম্মত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা থেকে উভয়ে দেশ ‘ভূমি, আকাশ ও সমুদ্রে সব ধরনের গোলাগুলি ও সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ’ করবে।
বিবিসি জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে করা এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা দিচ্ছি যে, ভারত ও পাকিস্তান অবিলম্বে একটি পূর্ণ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে। “বুদ্ধিমত্তা ও কাণ্ডজ্ঞান ব্যবহার করার জন্য উভয় দেশকে অভিনন্দন। এই বিষয়ে আপনাদের মনোযোগের জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।”
সংঘাত বন্ধে দুই দেশ অস্ত্রবিরতি শুরু করতে সম্মত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারও। দার বলেছেন, “সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সঙ্গে আপস করা ছাড়া পাকিস্তান সবসময় এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।”
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, ভারতের স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা থেকে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই ‘ভূমি, আকাশ ও সমুদ্রে সব ধরনের গোলাগুলি ও সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ’ করবে।
এর আগে কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা কমিয়ে আনার উপায় খুঁজে বের করতে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। শনিবার তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলে নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। রুবিও মুনিরের সঙ্গে ফোনালাপে ‘ভবিষ্যৎ সংঘাত এড়াতে’ দুই দেশের মধ্যে ‘গঠনমূলক’ আলোচনা শুরুর ক্ষেত্রে সহায়তারও প্রস্তাব দিয়েছেন বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের বিবৃতির বরাত দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি।
একইদিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার ভারতীয় কাউন্টারপার্ট জয়শঙ্করের সঙ্গেও কথা বলেন। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই উত্তেজনা কমানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে।” মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেও আলাদাভাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনে কথা বলে উত্তেজনা হ্রাসে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আর হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট বলেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমে আসুক এমনটা দেখতে চান। “প্রেসিডেন্ট চান এই উত্তেজনা যত দ্রুত সম্ভব কমুক। যদিও দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বৈরিতা রয়েছে এটা তিনি বোঝেন,” বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় সংঘাত বন্ধের অস্ত্রবিরতির সম্মতি নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য আসার পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, “পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন্স আজ (শনিবার) বিকালে তার সমমানের ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাকে ফোন করেছিলেন এবং দুই পক্ষ একমত হয়েছে যে স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা থেকে উভয়পক্ষ স্থলে, আকাশপথে এবং সমুদ্রে গোলাবর্ষণ বন্ধ করবে। ১২ মে দুইপক্ষ আবার কথা বলবে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ভারত পাকিস্তানের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।