নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্বাস্থ্য খাতের বেশির ভাগ কাজ বাস্তবায়িত হয় মূলত স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির মাধ্যমে। এই কর্মসূচি পাঁচ বছর মেয়াদি। চতুর্থ কর্মসূচি শেষ হয়েছে বছর দুয়েক আগে। পঞ্চম কর্মসূচি এ বছরের জুলাই মাসে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও তা পাস হয়নি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে গত সাত মাস থেকে কোনো অপারেশন প্ল্যান নেই। অপারেশন প্ল্যান না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সেবা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, অপারেশনাল প্ল্যান পাঁচ বছর মেয়াদি হয়। পাঁচ বছর পর পর একবার অপারেশন প্ল্যান করা হয়। তারপর সেই অপারেশন প্ল্যান অনুযায়ী কার্যক্রম চলে। অপারেশন প্ল্যান পাস না হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত বিভিন্ন দপ্তরের কার্যক্রম চরম ব্যাঘাত ঘটছে। নতুন অপারেশনাল প্ল্যান জাতীয় নির্বাহী কমিটি একনেকে পাঠানো হয়েছে, তবে এখনও তা অনুমোদন হয়নি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি অধিদপ্তরে কর্মরত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, গত সাত মাস আমাদের কোনো অপারেশন প্ল্যান নেই। অপারেশন প্ল্যানের মাধ্যমে আমাদের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। অপারেশন প্ল্যানের বাইরে আমরা কিছুই করতে পারি না। তিনি আরও বলেন, একটা অপারেশন প্ল্যান শেষ হয়েছে জুন মাসে। তারপর থেকে আমরা একদম খালি জায়গায় আছি। অপারেশন প্ল্যান না থাকায় কেনাকাটা বন্ধ, অনেকের বেতনও বন্ধ, সবই বন্ধ রয়েছে। অপারেশন প্ল্যান না থাকায় স্বাস্থ্য খাতে মোট ৩৮টি সেক্টরের সব কিছুই বন্ধ আছে। অপারেশন প্ল্যান যত তাড়াতাড়ি পাস হবে, তত তাড়াতাড়ি আমরা মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে পারবো।
অপারেশন প্ল্যানের অভাবে আর কী কী অসুবিধা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, অপারেশন প্ল্যানের অভাবে আমরা যে বিভিন্ন ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, জিনিসপত্র ক্রয়, সাপ্লাই, স্টাফের বেতন (আউট সোর্সিং), মনিটরিং, সুপারভিশন, ওষুধপত্র কেনা, এসবের কোনো কিছুই হচ্ছে না। এমনকি কি এখন প্যারাসিটামলও নেই আমাদের কাছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অপারেশনাল প্ল্যান গত জুলাই মাসের মধ্যে অনুমোদন হওয়ার কথা ছিল। আগামী ৫ বছরের স্বাস্থ্য খাতের অপারেশনাল প্ল্যান প্রণয়ন করা হলেও, এখনো সেটা অনুমোদন হয়নি। অপারেশন প্ল্যান অনুমোদনে যত বিলম্ব হবে দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন কার্যক্রম ততই বাধাগ্রস্ত হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক, জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ, জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন কর্মসূচি, যেমন বিভিন্ন রোগ নির্মূল, নিয়ন্ত্রণ, এগুলোর জন্য অপারেশন প্ল্যান করা হয়। ইতিমধ্যে প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। এই সময়ে পাবলিক হেলথের বিভিন্ন সমস্যা সংকোচন করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর ফলে অনেক কাজ সঠিকভাবে হয় নাই। তিনি আরও বলেন, অপারেশনাল প্ল্যান দেরিতে পাস হওয়ার কারণে আমাদের পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একটা চরম ঝুঁকি এবং সংকটের মধ্যে চলে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচি চলে অপারেশন প্ল্যান (ওপি) বা বিষয়ভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে। পুষ্টি, সংক্রামক রোগ, অসংক্রামক রোগ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য, বিকল্প চিকিৎসা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য এ ধরনের বিষয়ের জন্য পৃথক পৃথক ওপি করা হয়। এই অপারেশনাল প্ল্যানে পাঁচ বছরের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকে।
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.