স্যাবিকার্ড (ARNI) হার্ট ফেইলিওরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ। রোগীকে এই স্লিপ দিয়ে বাইরে কিনতে পাঠানো হয়েছে। ওষুধের দোকানদার দিয়ে দিয়েছে সোডিকার্ব। দুটো একেবারেই ভিন্ন জাতের দুটো ওষুধ।
রোগীর ছেলে দোকানদারকে বলল, ‘পাওয়ার’ তো মেলে না। দিয়েছে ৫০ মিগ্রা, আপনি দিলেন ৬০০ মিগ্রা। ওষুধওয়ালা দারুণ একটা উত্তর দিয়েছে। বলেছে, ডাক্তার ভুল করেছে। ভুল করে ৬০০ মিগ্রার বদলে ৫০ মিগ্রা লিখেছে। এই ওষুধ ৬০০ মিগ্রা ছাড়া হয় না। বেচারা আর কী করবে, সে ওষুধই নিয়ে এসেছে।
ওষুধটা আমাদের হাতে পড়াতে নাহয় পরিবর্তন করতে পাঠানো গেছে। ধরুন এই রোগীকে ছুটির কাগজে আমরা এই ওষুধটি লিখে দিয়েছি। আর রোগী প্রতিদিন সোডিকার্ব খেয়ে যাচ্ছে। কল্পনা করা যায়?
আজকেরই আরেক ঘটনা। রোগীকে আনতে দেওয়া হয়েছে Ancor (2.5 mg), রোগীকে দিয়ে দিয়েছে Fincor (10 mg)। রোগীকে বলেছে এই ওষুধ তো ২.৫ হয় না, ১০-ই হয়। অথচ একটা বিটা ব্লকার আরেকটা মিনারেলোকর্টিকয়েড রিসেপ্টর এন্টাগনিস্ট।
এটা শুধু আজকের ঘটনা বললাম। এমন যে কতো ঘটনা…
এক রোগীকে হার্ট ফেইলিওরের জন্য এমপাগ্লিফলোজিন দেওয়া হয়েছে। দোকানদার জিজ্ঞেস করেছে, আপনার কি ডায়াবেটিস আছে? রোগী বললেন, না। দেখেন ডাক্তার আপনাকে ডায়াবেটিসের ওষুধ দিয়ে রেখেছে। রোগীদের ওষুধের দোকানদারদের প্রতি অগাধ বিশ্বাস থাকে। সে ঐ ওষুধ বন্ধই করে দিয়েছে। আর খায়নি। বারবার হসপিটালাইজেশান।
ঠিক একই ঘটনা বহুবার ঘটেছে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের রোগীদের ক্ষেত্রে। তাদেরকে মেটফরমিন দেওয়া হলে ওষুধের দোকানদাররা ডায়াবেটিসের ওষুধ দিয়ে দিয়েছে বলে ভয় দেখিয়ে দেয়।
মক্সাক্লাভ ৩৭৫ মিগ্রা দেওয়া হয়েছে। এটি এন্টিবায়োটিক। ৩৭৫ দেখে দোকানদার দিয়ে দিয়েছে জেনোল ৩৭৫। যা একটা শক্তিশালী ব্যথার ওষুধ। আর বলেছে, ডাক্তার ভুল করেছে। ভুল করে ৩ বেলা লিখেছে। এটা ২ বেলা খাওয়ার ওষুধ।
হাই প্রেশার নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেয়ে ব্লাড প্রেশার ১১০/৭০ মিমি মার্কারি। ফার্মেসিওয়ালা জিজ্ঞেস করেছে আপনি কি এখনও ওষুধ খান? হ্যাঁ। হায়হায় করে উঠেছে ফার্মেসিওয়ালা। এই প্রেশারে ওষুধ খেলে তো মরবেন মিয়া। ঐ দোকানওয়ালাকে কে বোঝাবে, অনেকদিন প্রেশারের ওষুধ খেয়েই বিপি কন্ট্রোলে আছে। সেই থেকে রোগীর ওষুধ বন্ধ। এরপর এসেছে ২২০/১২০ মিমি মার্কারি বিপি নিয়ে।
এক বাচ্চার এক দিনের ডায়রিয়া। বিশ্বাস করবেন কি-না জানি না, ফার্মেসিওয়ালা গুনে গুনে ৫টি এন্টিবায়োটিক দিয়েছে। নিজের সামান্য লাভের জন্য শিশুটার ক্ষতি করতে এদের একটুও হাত কাঁপে না।
কিছু ফার্মেসিওয়ালা সন্ত্রাসের চেয়েও বড়ো অপরাধ করে। এরা সঙ্গোপনে নিজেদের মূর্খতা, অসভ্যতা ও লকলকে লোভের জন্য রোগীর যে কতো বড়ো ক্ষতি করে চিন্তাই করা যায় না। এদেরকে প্রতিহত না করা গেলে জনগণ নীরবে ধুঁকতেই হবে। রোগীর বড়ো বড়ো ক্ষতি হতেই থাকবে।
লেখক : ৩৯ তম বিসিএস, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.