মোঃ আবদুল আলীঃ
কোনপ্রকার এফিডেভিট ছাড়া জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সন্তান পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট বানিয়ে সৌদি আরব নিয়ে গিয়ে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ বিশ বছর অমানবিকভাবে খাটিয়ে শূণ্যহাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা থেকে বের করে দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি, ঠুকে দিয়েছে মামলাও। এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠেছে সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ৮ নং গারাংগিয়া ওয়ার্ডের রহমত আলী সিকদার পাড়ার মৃত মোহাম্মদ ইউসুফের ছেলে সৌদি আরব প্রবাসী মুহাম্মদ মহিউল ইসলাম প্রকাশ মনুর বিরুদ্ধে। সূত্রে প্রকাশ, সৌদি আরব প্রবাসী উক্ত মুহাম্মদ মহিউল ইসলাম চার কন্যা সন্তানের জন্মের পর পুত্র সন্তানের আশা ছেড়ে দিয়ে একই পাড়ার দরিদ্র মাতা-পিতার সন্তান মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। মহিউল ইসলাম নিজেকে পিতা এবং তার স্ত্রী রহিমা বেগমকে মাতা পরিচয় দিয়ে সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে মুহামদ শহীদুল্লাহর নামে পাসপোর্ট তৈরি করে নেন। ২০০২ সালে ১২ বছর বয়সী মুহাম্মদ শহীদুল্লাহকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে সৌদি আরবে নিয়ে যান। সৌদিআরবে মুহাম্মদ মহিউল ইসলাম ও রহিমা বেগম দম্পতির সন্তান হিসেবে মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বড় হতে থাকে। বার বছর বয়সে মুহাম্মদ শহীদুল্লাহকে মহিউল ইসলাম জেদ্দাস্থ নিজের দোকানের কাজে লাগিয়ে দেন। অল্প বয়সে মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সততা, অমায়িকতা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে মুহাম্মদ মহিউল ইসলামের ব্যবসাকে ফুলেফলে পল্লবিত করে তুলে। এভাবে কেটে যায় প্রায় দুই দশক। মহিউল ইসলাম দম্পতির সন্তান পরিচয়ে পরপর চারবার পাসপোর্ট নবায়ন করে দীর্ঘ বিশ বছর শহীদুল্লাহ সৌদি আরব-বাংলাদেশ যাতায়াত করে এবং একই পরিচয়ে ২০১৮ সালে কামিননামাও সম্পাদন করে। ইত্যবসরে চারটি কন্যা সন্তানের পর মুহাম্মদ মহিউল ইসলামের প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে জন্ম নেওয়া তিন ছেলে সন্তান বড় হওয়ার সাথে সাথে ধূর্ত মহিউল ইসলাম ফন্দি আঁটতে থাকে কিভাবে শহীদুল্লাহকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়। ২০২১ সালের শুরুতে নানান ধরনের খোঁড়া অজুহাত সৃষ্টি করে শহীদুল্লাহকে বারবার গালমন্দ ও হেনস্তা করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে তাকে দোকান এবং বাসা থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়। শহীদুল্লাহ দীর্ঘ দুই দশক ধরে হাড়ভাঙ্গা খাটুনির বিনিময়ে নিজের ন্যায্য প্রাপ্য দাবী করলে তাকে মারধর করে। অসহায় শহীদুল্লাহ জেদ্দায় কর্মরত বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও স্থানীয় কপিলে কাছে বিচার চাইলে মহিউল ইসলাম বারবার সময় ক্ষেপন করে। এভাবে নানান তালবাহানা ও সময় ক্ষেপনের মাঝে মহিউল ইসলাম নেপথ্যে থেকে চট্টগ্রামের দারুল মা’আরিফ মাদ্রাসার দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত তার বড় ছেলে মোহাম্মদ বিন মাহীকে বাদী বানিয়ে ফৌজদারি অভিযোগ আনয়ন করে চট্টগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিট্টেট আদালতে সি আর মামলা নং ২৮/২০২৫ দায়ের করে। মামলার আর্জিতে মোহাম্মদ বিন মাহী দাবী করেছে, বিবাদী মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ নাকি ভবিষ্যতে তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা করার কু-উদ্দেশ্যে তার পিতা মহিউল ইসলাম ও মাতা রহিমা বেগমের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট ও পাসপোর্ট তৈরি করে নেন। এ ব্যাপারে মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে বাদীর বাবা-মা যখন আমাকে সন্তান পরিচয় দিয়ে সৌদি আরব নিয়ে যান (২০০২) তখন বাদীর জন্মই হয়নি। বাদী মোহাম্মদ বিন মাহীর জন্ম হয় আরো আট বছর পর ২০১০ সালে। যদিও ভুয়া তথ্য দিয়ে ২০০৭ সালের জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছে তার ধূর্ত পিতা। কান্নাজড়িত কন্ঠে শহীদুল্লাহ জানান, মা-বাবা মান্য করে যাদের আয়-উন্নতির জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজের জীবনের বিশটি বছর শেষ করে দিলাম তারা আমার সাথে এমন নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে- তা ভাবতেই কষ্ট হয়। এমন নিষ্ঠুর আচরনের বিচারের ভার আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত ভূয়া, মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আইনীভাবে মোকাবিলা করে ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবেন বলে ভুক্তভোগী শহীদুল্লাহ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এতদসংক্রান্ত বিষয়ে সৌদি আরবে অবস্থানরত মুহাম্মদ মহিউল ইসলামের ওয়াটসআপ ও ইমু নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.