আমি শয়নগৃহে, চারপায়ীর উপর বসিয়া, হুঁকা হাতে ঝিমাইতেছিলাম। একটু মিটমিট করিয়া ক্ষুদ্র আলো জ্বলিতেছে-দেয়ালের উপর চঞ্চল ছায়া, প্রেতবৎ নাচিতেছে। আহার প্রস্তুত হয় নাই-এজন্য হুঁকা হাতে, নিমীলিতলোচনে আমি ভাবিতেছিলাম যে, আমি যদি নেপোলিয়ন হইতাম তবে ওয়াটার্লু জিতিতে পারিতাম কি না। এমত সময়ে একটি ক্ষুদ্র শব্দ হইল, ‘মেও’! (বিড়াল – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
কবি,লেখক, উপন্যাসিক অনেকেই বিড়ালকে নিয়ে অনেক কল্পিত কথোপকথন, তাদের চিন্তাচেতনা তুলে ধরেছেন তাদের লেখনীতে। আজকে সেই বিড়াল পালনের শারীরিক সুবিধা সম্পর্কে জানবো।
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়ালের কদর সবচেয়ে বেশি। বিড়াল শান্তশিষ্ট প্রাণী, তার মেজাজ-মর্জিও অন্যসব পোষা প্রাণী থেকে আলাদা। বিড়ালের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ যুগ যুগ ধরে অব্যাহত। ঠিক কবে থেকে বিড়ালকে পোষা প্রাণী হিসেবে রাখার প্রচলন শুরু হয়, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। আসলে বিড়াল পালনের উপকারীতা কিন্তু অনেক।
◼️ বিড়াল স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় কারণ বিড়াল পোষার মাধ্যমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমানো যায়। যারা বিড়াল পোষেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অন্যদের থেকে ৩০ শতাংশ কম।
◼️ বিড়াল উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
◼️ বিড়াল এলার্জি প্রতিরোধে সহায়তা করে। ২০০২ সালে ন্যাশনাল হেলথ ইন্সটিটিউটের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, এক বছরের নিচের যেসব শিশু বিড়ালের প্রেমে মগ্ন থাকে, তাদের বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি হবার সম্ভাবনা কম।
◼️ বিড়াল মানসিক চাপ কমায় কারণ বিড়াল আপনার শরীরের কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কর্টিসল হল এক ধরণের রাসায়নিক- যা মানসিক চাপে থাকলে নির্গত হয়। এর মাত্রা যখন কম থাকবে তখন আপনি ভালো বোধ করবেন। অপেক্ষাকৃত কম চাপ বোধ করবেন।
◼️ বিড়ালের উপস্থিতিতে ঘুম ভালো হয়। মায়োক্লিনিক সেন্টার ফর স্লিপ মেডিসিন কর্তৃক ঘুমের সঙ্গী হিসেবে বিড়ালকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, বিড়াল পোষেন এমন ব্যক্তিদের ৪১ শতাংশ মনে করেন, বিড়ালের উপস্থিতিতে তাদের ভালো ঘুম হয়েছে
◼️ বিড়াল ব্যক্তির রাগ, উদ্বেগ কমায়।
◼️ বিড়ালের মিউ মিউ ডাক বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ধ্বনিগুলোর একটি, যা শরীরের পেশী ও অস্থির প্রদাহ নিরাময়ে থেরাপির মতো কাজ করে।
◼️ বিড়াল মুড ভালো রাখার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। কখনো যদি খারাপ বোধ করেন, আপনার বিড়ালের সঙ্গে খেলা করুন। তার যত্ন নিন। এর মাধ্যমে আপনার শরীরে সেরোটোনিন নির্গত হবে। সেরোটোনিন হল এক ধরণের রাসায়নিক- যা উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে।
◼️ একাকিত্ব কোন পরিস্থিতিতেই ভালো নয়,বিড়াল আপনার একাকিত্ব দূর করতে পারে।
◼️ অটিস্টিক শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য বিড়াল খুবই কার্যকরী, বিড়াল সারাদিন তাদের সাথে খেলবে এতে করে প্রাকৃতিক উপায়ে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব গবেষণায় এমন বিষয়ই উঠে এসেছে।
◼️ বাড়িতে ইঁদুর থাকলে বিভিন্ন খাবারের উপর জীবানু ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে,ফলে স্বাস্থ্যঝুকিতে পরতে হতে পারে। বিড়াল ঘরে থাকলে ইদুরের উপদ্রব কমে৷
◼️ বিড়াল শিশুদের সংক্রমণ সক্ষমতা বাড়ায় ফলে বড় হয়ে ইনফেকশন কম হয়।
পরিশেষে বিড়াল আপনার অবসর সময়ের খুব ভালো একজন বন্ধু ও সঙ্গী হতে পারে, যা আপনাকে আনন্দ ও প্রশান্তি এনে দেবে। যারা বিড়াল পালন করে তারা কম রোগে ভোগে অর্থাৎ তুলনামূলক বেশি সুস্থ থাকে। তবে বিড়াল পালনে যে অসুবিধা নেই এটা বললেও ভুল হবে। ভালো-মন্দ মিলিয়েই দুনিয়া। তাই বিড়াল পালন করবেন কী করবেন না দিন শেষে তা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত!
লেখকঃ আনিকা আনতারা প্রধান
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.