লেখা: হৃদয় বড়ুয়া (মানবাধিকার কর্মী)
______________________________
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর ও বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। এই নগর ঘিরে জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১১ লক্ষ ৭৫ হাজার ২৬ জন। সবুজ, শস্য-শ্যমলা মাতৃভূমি ত্যাগ করে কর্মের টানে কিংবা উচ্চ শিক্ষার জন্য এই ধূসর ধূলিমাখা ইট পাথরের দালান নগরীতে ছুঁটে আসে। এ-ব্যস্ততম শহরে জীবন ও পরিবারকে সুন্দরভাবে গঠন করতে এসে প্রতিনিয়ত কোন না কোনভাবে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। কত কোল খালি হচ্ছে মায়ের। কত শোক বয়ে বেড়াচ্ছে পরিবার কিংবা স্বজনরা। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য সূত্রে ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১,২০৫ জন। সারাদেশে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৮ হাজার মানুষ।
ঠিক তেমনি চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম সড়ক গুলো এপার-ওপার পাড়ি দেওয়া যেন অসাধ্য সাধন। পথচারীদের রাস্তা পারাপার হতে অধিক সময় ব্যয় করতে হয়। তামধ্যে জীবনের ঝুঁকি তো রয়েছে। এমন ব্যস্ততম সড়ক ঘিরে তৈরি হয়েছে মার্কেট, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট ও বিভিন্ন খাবারের দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কর্মমূখী মানুষদের ছুটে চলা জীবিকার অন্বেষন। রাস্তার দুই পাশদিয়ে যত্রতত্র জায়গায় গাড়ি পাকিং ও রাস্তার মাঝখানে যাত্রী উঠা-নামাসহ নানান বিশৃঙ্খল ঘটনা তো রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন মোড়ে পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দ্রুতগামী যানবাহন এড়িয়ে রাস্তা পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ এসব পয়েন্টের বেশিরভাগেই কোনো পদচারী সেতু নেই। তাছাড়াও নগরীর তীব্র যানজট তো রয়েছে। এমন যানজটের কারণ হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণ চলাচলের জন্য ফুটপাত না থাকা ও হকারদের ফুটপাত দখল, যত্রতত্র জায়গায় গাড়ি পাকিং এবং রাস্তার মাঝখানে যাত্রী উঠা-নামাসহ নানান দৃশ্য দেখা যায় যেটি ব্যস্ততম সড়ককে ঝুঁকিপূর্ণ গড়ে তুলে। সড়ক দূর্ঘটনা কিংবা যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে লোকাল যানবাহন গুলো সাধারণত বেশি দেখা যায়।
ঠিক তেমনি; প্রতিদিনের মতো সেদিনও সকালে যান্ত্রিক জীবনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। যাতায়াতের সুবিধাত্বে রাস্তা পারাপার হচ্ছিলাম। জরাজীর্ণ ২য় বিশ্বেযুদ্ধে অনাহারী একটি বাস রাস্তার মাঝপথে যাত্রি উঠা-নামা করছে। সাধারণত আমরা দেখি লোকাল যানবাহনের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে; প্রবাদে- কে কার আগে যাবে শশুড় বাড়ি! ঠিক তেমিনি পিছন থেকে আরো একটি বাস প্রচন্ডভাবে ছুটে আসছিলো যেটি আমি সামনে থাকা বাসটির জন্য খেয়াল করিনি। পিছন থেকে ছুঁটে আসা বাসটিকে বাঁধা দিতে সামনে থাকা জরাজীর্ণ বাসটি রাস্তার মাঝপথে শুয়ে পড়ে। আমিও রাস্তা পার হচ্ছি তৎক্ষাণিক পিছনের বাসটি জরাজীর্ণ বাসটিকে ঘেসে চলে এসেছে অপর পাশে একটি রিক্সা এবং আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সেকেন্ডের জন্য অনুভব হয়েছে এই জীবনীর গল্প বোধয় শেষের অধ্যায় ছিল। তবে পিছন থেকে ছুটে আসা ড্রাইভারটি হার্টব্র্যাক না করলে জরাজীর্ণ বাস ও রিক্সাসহ আমি মারাত্মক দূর্ঘটনার শিকার হতাম। নিশ্চই আমার কোন ভালো কর্মের জন্য মহান করুণাময় আমাকে এমন দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা করেছেন। আমার মতো এমন অনেক হৃদয় প্রতিনিয়ত কোন না কোনভাবে দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা দিনকে দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে অন্যতম কারণ পদচারী সেতুর অভাবে পথচারীদের অনিরাপদভাবে রাস্তা পার হওয়া। বন্দর নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেও জেনেছি চকবাজারের গুলজার মোড়, চকবাজারের পয়েন্টে নবাব সিরাজউদ্দৌলা রোড, কোতয়ালী, বহদ্দারহাট, ষোলশহর গেট নম্বর ২, ওয়াসা, দেওয়ান হাট, চৌমুহনী, আগ্রাবাদ বাদামতল, অক্সিজেন, আন্দরকিল্লা, লালদিঘী, একে খান, অলঙ্কার, কাজীর দেউড়ি ও জিইসি মোড়সহ নগরীর প্রায় ৪০টি এলাকায় পদচারী সেতু নেই। এতে পথচারীদের দুর্ভোগ পোঁহাতে হচ্ছে। এমন ধারিবাহিকতায় পথচারীদের সুবিধার্তে ও দূর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে পদচারী সেতু নির্মান যেমন অতীব জরুরী তেমন জরাজীর্ণ কিংবা বিশৃঙ্খল যানবাহন গুলোর বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী।