এসএমটিভি প্রতিবেদক :
কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলের নোনাজলে কাঁকড়া চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি কাঁকড়াও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হিসেবে জায়গা দখল করে নিয়েছে।
বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশি কাঁকড়ার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকেই। তাই কক্সবাজারের কাঁকড়া এখন বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখছে। আশির দশকের শুরুতে প্রথম অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়। কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকায় এখন বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক কাঁকড়ার চাষ হচ্ছে। জেলার অনেক চিংড়ি চাষি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আর আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতনের কারণে এখন কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন। বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ২৮ হাজার টন কাঁকড়া রপ্তানি করছে।
জানা গেছে, হাঁটি হাঁটি পা পা করে ১৯৭৭ সালে যে কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়েছিল, তা এখন যাচ্ছে বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশে। এখানেই শেষ নয়, দেশের প্রায় ১৫ প্রজাতির কাঁকড়াই বিদেশিদের কাছে আকর্ষণীয় এবং সুস্বাদু হওয়ায় বিশ্ববাজারে রপ্তানির অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশে কাঁকড়া আহরণের সবচেয়ে বড় ভাণ্ডার কক্সবাজার ও সুন্দরবন। তবে বাড়তি দামের আশায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকারের মহোৎসবও চলছে। যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে ১৯৭৭ সালে মাত্র ২ হাজার ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হতো। এখন তা বেড়ে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ কোটি ১০ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মার্কিন ডলার। ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে বিদেশে প্রথম কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়। এরপর রপ্তানি বন্ধ থাকে প্রায় ৩ বছর। ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে আবার বিদেশে রপ্তানি করা হয়। পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা বাড়ায় রপ্তানি আয়ও বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে ইপিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি কাঁকড়ার চাহিদা আছে। কিন্তু কাঁকড়ার চাষটা ঠিকমতো হচ্ছে না। যদি এর পরিধি আরও বাড়ানো যায় তা হলে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো। সীমিত ভাবে উৎপাদিত স্থানীয় বা প্রাকৃতিক কাঁকড়াই এখন রপ্তানি করা হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বজলুর রহমান জানান, চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়া চাষ অনেকাংশে নিরাপদ। চিংড়ি সহজে ভাইরাস আক্রান্ত হয়। আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে কাঁকড়া। কারণ কাঁকড়া ভাইরাস বহনকারী প্রাণী। যা চিংড়ির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। কাঁকড়া নিজেই ভাইরাস বহন করে বলে তারা অন্য ভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। এ কারণে দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে কাঁকড়া চাষ।
বজলুর রহমান আরও জানান, জেলায় ৭৮০ জন কাঁকড়া চাষি তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এর বাইরে আরও ৫ শতাধিক ব্যক্তি কাঁকড়া চাষ করছেন। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান, হংকং ও সিঙ্গাপুরে কাঁকড়ার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। নিয়মিত ২০টিরও বেশি দেশে কাঁকড়া রপ্তানি করা হচ্ছে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কক্সবাজারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান জানান, প্রথম ২০০৩ সালে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন ও চাষ বিষয়ে গবেষণা শুরু করে কক্সবাজার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলে একটি প্রদর্শনী কেন্দ্রে ২০১৩ সালে সফলভাবে কাঁকড়া পোনা উৎপাদন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই চাষ ছড়িয়ে দেওয়া হয় উপকূলীয় অঞ্চলের চাষিদের মাঝে।
লেখক : সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম।
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.